ঢাকা: আবাসিক এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনর ধোলাইপাড় এলাকার (৫১ নম্বর) ওয়ার্ডবাসীরা। এলাকাবাসীর অনুরোধ সত্ত্বেও প্রাচীন পুকুর ভরাট করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণ স্থগিত চেয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে এলাকাবাসী।
এদিকে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণের জায়গাটি কোনো জলাশয় নয়, বরং পরিত্যাক্ত জায়গা বলে বুধবার (১৮ আগস্ট) বাংলানিউজকে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ১৬ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর দেওয়া এলাকাবাসীর স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘অত্র এলাকায় অবস্থিত সরকারি জলাশয়ে (পুকুর) ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণ হবে। পশ্চিম ধোলাইপাড় একটি আবাসিক এলাকা যেখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। যে স্থানে আবর্জনা নির্মাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, তার একপাশে কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং অন্যপাশে মসজিদ ও চারপাশে সারিবদ্ধ আবাসিক বাড়িঘর অবস্থিত। ’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আবাসিক ও পরিবেশ আইনের ধারা মতে উক্ত বিষয়টিকে বিবেচনা করে আমরা এলাকাবাসী উক্ত আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা অনুরোধ করেছি যেন আবাসিক এলাকার মাঝখানে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপিত করা না হয়। এলাকাবাসীর অনুরোধ সত্ত্বেও প্রাচীন পুকুর ভরাট করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় বিষয়টি বিবেচনা করে আবাসিক এলাকার মাঝখানে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি স্থগিত করার জন্য অনুরোধ করছি। ’
তবে ধোলাইপাড় এলাকার আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণের জায়গাটি কোনো জলাশয় নয়, বরং পরিত্যাক্ত জায়গা বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৮ আগস্ট) বাংলানিউজকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বিয়ষটি জানান।
তিনি বলেন, ওটা মূলত পরিত্যক্ত একটা জায়গা। এটা মেয়র সাহেবও জানেন। বিশেষ করে কোনো জলাধার বা জলাশয়, এগুলো তো আমরা আরও সংরক্ষণ করছি। সেক্ষেত্রে এটা বিপরীতমুখী হয়ে যাচ্ছে না! এখন ব্যাপার হচ্ছে একটা এলাকার নিচু জায়গা, পরিত্যক্ত জায়গা, সেখানে তো বৃষ্টির পানিতে বা এমনিতেই পানি জমা হতে পারে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী এ প্রকৌশলী বলেন, এটা যদি জলাশয় হিসেবে আগে থেকেই থাকতো বা খাল হিসেবে আগে থেকেই থাকতো, তাহলে সেই বিষয়টা আলাদা ছিল। সেক্ষেত্রে আমরাই এটাকে নতুন করে সংরক্ষণের চেষ্টা করতাম। আমরা সেটা করছিও। অনেক পুকুর, অনেক খাল, খেলার মাঠ, নদীর ধার; এগুলো তো আমরা আরও বেশি ডেভলপ করছি। কিন্তু আমি যতটুকু জানি, এটা একটি নিচু পরিত্যক্ত জায়গা।
শফিউল্লাহ সিদ্দিক বলেন, আমাদের একটা ভিশন, প্রতিটা ওয়ার্ডে একটি করে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হবে। ওই ওয়ার্ডে যেন বিচ্ছিন্নভাবে কেউ ময়লা না ফেলে। একটা জায়গায় এলাকার সব ময়লা একত্রিত হবে। এরপর আমরা আমাদের পরিবহন দিয়ে সেগুলো সরিয়ে নিব। এটা স্বাস্থ্যসম্মত একটা বিষয়। অনেকেই ভাবতে পারেন বাসার সামনে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হলে সমস্যা। আসলে তা নয়, আমরা নতুন যেগুলো তৈরি করছি, এগুলো আমরা যথাযথ ভাবে ভেন্টিলেশন, লাইটিং, পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা রাখছি। এগুলো অধিক উন্নতমানের। যথেষ্ট আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, ধোয়া-মোছার ব্যবস্থা এবং পরিবেশ সুন্দর করার জন্য বৃক্ষরোপণও করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
এইচএমএস/কেএআর