টাঙ্গাইল: আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মুক্তি গত আট মাস ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। মঙ্গলবার ১১ বারের মতো তার জামিন আবেদন আদালত না মঞ্জুর করেন।
টাঙ্গাইলের জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সহিদুর রহমান খান মুক্তি সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পরে কারাগারের চিকিৎসক আবিবুর রহমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজীব জানান, দুপুর ১২টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ মুক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. প্রণব কুমার কর্মকার জানান, মুক্তির বুকের ব্যথা পিঠেও ছড়িয়ে পড়ছে। শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এছাড়া রক্তচাপও বেড়েছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর তার চিকিৎসার ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক ছিলেন মুক্তি। পরে গত ২ ডিসেম্বর মুক্তি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকে তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার কলেজ পাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্ট এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দু’জনকে গ্রেফতার করে। আদালতে এ দু’জনের দেওয়া স্বাীকারোক্তিতে এ হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এর পর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যান। রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পন করেন। প্রায় তিন বছর হাজতবাসের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। তাদের অন্য দুই ভাই এখনও পলাতক।
এদিকে মুক্তি কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে বাইরের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির। মঙ্গলবার টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি। পরে এ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং জেল সুপার।
জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামী বৃহস্পতিবার কমিটির প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর এর কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
এসআই