ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক যেন মরণফাঁদ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক যেন মরণফাঁদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক যেন মরণফাঁদ। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: সড়কটির অবস্থা খুবই করুণ। ইট, খোয়া বা বালুর কোনো চিহ্নই নেই।

গাড়ি তো দূরের কথা ভ্যানও চলাচল করতে পারে না।

খুলনার রূপসা উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটির করুণ অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বাগমারার বাসিন্দা ব্যবাসীয় মো. লিটন সোমবার (২৩ আগস্ট) বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাস্তাটির পাশে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৭ বছর আগে এ রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর এক-দেড় বছর ভালো ছিল। রাস্তাটিতে প্রচুর ১০ চাকার ডাম্পার চলে। ধারণ ক্ষমতার বেশি লোড নিয়ে এসব গাড়ি চলাচল করায় রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে।

জাবুসা এলাকার বাসিন্দা মোবাইল অপারেটর মো. আব্দুল্লাহ বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ব্যাংকের মোড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। একটু বর্ষা হলেই কাঁদা পানি ও খানা-খন্দে দুর্ভোগের স্বীকার হতে হচ্ছে। বড় বড় গর্তের কারণে পুরো সড়কটির এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হওয়ার পরও দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বড় বড় যানবাহন চলাচল করার কারণেই সড়কটি দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহনে মালামাল বোঝাই করে চলাচল করতে হচ্ছে চালকদের। ভাঙা আর গর্তে ভরা। কোনো কোনো স্থান দেবে উঁচু-নিচু হয়ে আছে। কেউ অসুস্থ হলে এ সড়ক দিয়ে খুলনা শহরে বা উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে রোগীর মৃত্যু হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

আব্দুল্লাহ জানান, সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ সরে গর্ত তৈরি হয়েছে। পুরো রাস্তা যেন একটি বিশাল ধ্বংসস্তূপ। খানাখন্দে ভরা সড়কে দুর্ভোগ নেমে আসে বর্ষায়। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কর্দমাক্ত হয়ে গ্রামের বর্ষকালীন মেঠোপথে রূপ নেয়। চলাচলের সময় হঠাৎ গাড়ি চলে এলে পুরো শরীর কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।

কয়েকজন চালক জানান, সড়কের এই বেহাল অবস্থায় প্রায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় গাড়ি উল্টে যায়। ঘটে দূর্ঘটনা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, পূর্ব রূপসা বাস স্ট্যান্ড থেকে খানজাহান আলী (র.) সেতু সংলগ্ন ওরিয়ন পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত এলজিইডি’র আওতাধীন সড়কটি সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ।

জানা গেছে, বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫০ গজ গেলেই রূপসা নদীর পাড়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার। এছাড়া এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে প্রায় ১৫টি হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক কোম্পানি। কয়েকটি বরফকল, প্যাকেজিং কোম্পানি, কোস্টগার্ডের কার্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়কটি দিয়ে বালু, পাথর, ইট, খোয়া বোঝাই ড্রাম ট্রাক, মাছ কোম্পানির গাড়ি এবং কয়লা ও টাইলসের মাটির ভারী যানবাহন চলাচল করে। মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানির গাড়িও চলে। যা ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। এসব কোম্পানিতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। যাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। এছাড়া এ এলাকার বাসিন্দাদের রূপসা সেতুতে যেতে হয় এ সড়ক দিয়ে।  

পথচারী ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কারের দাবি করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম অহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন সড়কটি ভিলেজ রোড ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। এটা যদি উপজেলা সড়ক বা ইউনিয়ন সড়ক হতো তাহলে দ্রুতই কাজ করাতে পারতাম। রাস্তাটি ভিলেজ রোডের নকশা অনুযায়ী করা। যেখানে ২০ টন লোট নেওয়ার ক্ষমতা সেখানে ৫০ টন লোড দিয়ে ট্রাক চলে। ৫০-৬০টি ঘাট করে বালু পাথর আনা হয় এ সড়ক দিয়ে।

তিনি বলেন, আমাদের ৪টি ক্যাটাগরির রোড আছে। একটি হলো- ইউনিয়ন রোড, উপজেলা রোড, ভিলেজ রোড-এ ও ভিলেজ রোড-বি। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন সড়ক পড়েছে ভিলেজ রোড- এ এর মধ্যে। এ বছর রোড তালিকা আপডেট হয়েছে। আমি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন সড়কটি ইউনিয়ন রোডের তালিকার মধ্যে রেখেছি। রুহুল আমিনের মাজার থেকে ওরিয়ন পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২/৩ জায়গায় নদীর ভাঙন আছে। এখানে নদী হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। নদী তো আমদের নয়। রাস্তা করতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধা দেবে। এই কয়েকটা সমস্যা রয়েছে রাস্তা নির্মাণে।

তিনি জানান, সবশেষ রাস্তাটি ৭/৮ বছর আগে সংস্কার করা হয়েছে। এখন রাস্তারটি করতে গেলে চওড়া করতে হবে। আরসিসি করে রাস্তা করতে হবে। নদীর ধারে প্রটেকশন দিতে হবে। যার করতে গেলে প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা লাগবে। এই টাকা কে দেবে? ছোট ছোট প্রজেক্টে এটা করা সম্ভব নয়। বড় প্রজেক্টের মাধ্যমে এটা করতে হবে।

নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ খেতাবধারী বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের নামের রূপসা নদীর পাড়ের এ সড়কটি দীর্ঘ দিন ধরে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে আছে। অথচ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। অবিলম্বে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান নিসচাইয়ের এ নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
এমআরএম/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।