সিরাজগঞ্জ: ইলেকট্রিক ব্যবসায় বেশ সফলতা পেয়েছিলেন আব্দুল মতিন (৩৮)। তার দোকানে গ্রাহক বেশি আসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলেন তার পাশের ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম।
এদিকে নিরঞ্জন তির্কি নামে এক ব্যক্তির ঘরে রাতের আঁধারে কে বা কারা ঢিল ছোড়ে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরিফুল নিরঞ্জনের ঘরে ঢিল ছোড়ার দায় মতিনের ওপর চাপিয়ে বলে, তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করার জন্য ঢিলটা ছুড়েছে মতিন। এতে নিরঞ্জনও মতিনের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরিফুল ও নিরঞ্জন আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় মতিনকে ঘাড় মটকে হত্যা করে স্কুলের টয়েলেটের ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়।
রোববার (২৯ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিরাজগঞ্জে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, গত ১৬ জুন সকালে তাড়াশ উপজেলার গুল্টা বাজার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের টয়লেটের সামনে থেকে আব্দুল মতিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মোতালেব হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। ১৯ জুন মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে। পিবিআইয়ের পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক আব্দুল খালেক মামলাটি তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে এ হত্যার পেছনে পরকীয়ার বিষয়টি সামনে আসলেও পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কর্মকর্তারা হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের বিষয়ে নিশ্চিত হন।
গত ২৫ আগস্ট এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তালম গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (৩১), গুল্টা গ্রামের মৃত বাবুলাল তির্কীর ছেলে নিরঞ্জন তির্কী (৪৭), স্থানীয় মৃত সুধীর এক্কার ছেলে লালন এক্কা (২৪) ও খোকা তপ্যর ছেলে রাজ কুমার তপ্যকে (৩১) গত ২৫ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম আরিফ ও নিরঞ্জন তির্কী ২৬ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার দিন ১৬ জুন রাত ১টার দিকে মতিন দোকান বন্ধ করে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় তার পথরোধ করে আরিফুল, নিরঞ্জন, নিরঞ্জনের স্ত্রী পদ্মা ও নিরঞ্জনের ছেলে মিঠুন। এ সময় তাদের মধ্যে কাটাকাটির একপর্যায়ে নিরঞ্জন ও আরিফের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় মতিনের। নিরঞ্জনের সহায়তায় মতিনের ঘাড় মটকে দেয় আরিফ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান মতিন। বাকি আসামিরা রাস্তার দুপাশে পাহারায় ছিলেন। পরবর্তীতে মতিনের মরদেহ ১৫ মিনিট নিরঞ্জনের বাড়িতে রাখা হয় এবং মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে ডোবার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ওই রাতেই মতিনের মরদেহ গুল্টা বাজার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের টয়লেটের ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, এ হত্যার ঘটনায় নাম এসেছে আরও একাধিক ব্যক্তির। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
আরএ