ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মধুমতির পাড় ভাঙনে পানি মাড়িয়ে চলাফেরা 

জয়ন্ত জোয়ার্দার, ডিস্ট্রিক্ট কসেরপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
মধুমতির পাড় ভাঙনে পানি মাড়িয়ে চলাফেরা 

মাগুরা: মাগুরার মহম্মদপুর  উপজেলা সদর ইউনিয়নের চরপাচুড়িয়া গ্রামের মধুমতি নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার হাজারো মানুষ। গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।

প্রতিদিন নানা কাজে চার-পাঁচবার উপজেলা সদরে আসতে হয় হাঁটু থেকে কোমর পানি ও দুই কিলোমিটার রাস্তার ভয়াবহ কাদা মাড়িয়ে।

এই সড়ক দিয়ে চর পাচুড়িয়াসহ ফরিদপুরের বোয়ালমারি  উপজেলার চরনারানদিয়া, রায়পাশা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে।

চরপাচুড়িয়া গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুর  উপজেলা সদর ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই গ্রামটি। এ গ্রামটির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলার সঙ্গে বিরোধ ছিলো। প্রায় দুই বছর আগে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। সীমানা বিরোধের কারণে এখানে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যায়নি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত মধুমতি নদী পাড়ের  চর পাচুড়িয়া গ্রামটিতে ন্যূনতম কোনো নাগরিক সুবিধা নেই।

চরপাচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন মোল্ল্যা (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, চরপাচুড়িয়া গ্রামে সাড়ে চার হাজার মানুষ রয়েছে। আশপাশে আরও তিন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলের অন্য কোনো রাস্তা না থাকায় নিরুপায় হয়ে এই পথ দিয়ে চলাচল করতে হয়। এ পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার বা পাকাকরণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এই এলাকার সাধারণ মানুষ।

কামাল হোসেন (৩০) জানান, উপজেলা সদরে বাস করে আমরা চরম অবহেলিত। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকার। উপজেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। নানা কাজে উপজেলা শহরে যেতে হয় পানি ও কাদা মাড়িয়ে। আমাদের এখানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।

খায়রুল ইসলাম (২৫) বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলো না। কয়েকটি অংশে বিদ্যুৎ আসলেও রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সঙ্গে আছে মধুমতির ভাঙন। ভাঙনে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

মহম্মদপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলে, বর্ষা মৌসুমে মধুমতি নদী ভাঙন বেশি দেখা দেয়। এ সময় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকে। এ বছর নদী ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। তাছাড়া আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও থানা, হাসপাতাল সব কিছুই মহম্মদপুর সদরে অনেক সময় কোমর পানি মাড়িয়েই যাতায়াত করতে হয়। খুব কষ্ট হয়।

নান্নু মিয়া (৪০) জানান, তার মেয়ে কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সারারাত চেষ্টা করেও হাসপাতালে নিতে পারেননি। রাস্তা না থাকায় কোনো যানবাহন ছিল না বলে। পরে ভোরে  কয়েকজনের সহযোগিতায় ঘাড়ে করে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান।  
 
শিউলি বেগম  (৩৫)  বলেন, কিছুদিন আগে গ্রামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আসতে না পারায় ১০-১২টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
          
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল জানান, সদর ইউনিয়নের এক নম্বর মৌজায় চর পাচুড়িয়া গ্রাম অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে সীমানা বিরোধ থাকায় এখানে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া যায়নি। এবার সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এস এ রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। এখন উন্নয়ন প্রকল্প নিতে আর বাধা নেই। চরপাচুড়িয়াবাসীর সমস্যা সমাধানে দ্রুত সম্ভব অগ্রাধীকার প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন কমকর্তা সরোয়ার হাজান সুজন বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পানি উন্নয়ন অফিসের পক্ষ থেকে মহম্মদপুরে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন কর হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা জিওবি ব্যাগ ফেলে অস্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। আশাকরি কিছু দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
 

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।