ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাজারে দেশি মাল্টা, কমছে আমদানি নির্ভরতা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১
বাজারে দেশি মাল্টা, কমছে আমদানি নির্ভরতা

ঢাকা: দেশের বাজারে ব্যাপকহারে আসতে শুরু করেছে সবুজ মাল্টা বারি-১। দেশি জাতের এই সবুজ মাল্টা খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু।

নতুন এ জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।  

বিদেশ নির্ভরতা কমাতে প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে মাল্টা-কমলা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল দুই বছর আগে। এ কারণেই দেশের বাজারে সবুজ মাল্টা দেখা যাচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।  

জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি-১ ও বারি-২ নামে মাল্টার দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বারি-১। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকরগাঁও, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাটোর, মেহেরপুর ও যশোরে নতুন জাতের এ মাল্টা প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বারি মাল্টা-১ বাংলাদেশে উদ্ভাবিত এক প্রকার মাল্টা ফল। বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা বারি মাল্টা-১ এর চাষাবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। সঠিক পদ্ধতিতে বারি মাল্টা-১ চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়। শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য উত্তম। বায়ুর আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত ফলের গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। অতি বৃষ্টিতে ফল বেশি রসালো হয়। মাল্টা প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে ছায়া পড়ে না এমন সুনিষ্কাশিত উর্বর, মধ্যম থেকে হালকা দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির অম্লত্ব ৫.৫ থেকে ৬.৫ হওয়া উত্তম। বীজ ও অঙ্গজ উভয় পদ্ধতিতে মাল্টার বংশবিস্তার হয়। তবে মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফল ধরা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। জোড় কলম (গ্রাফটিং) ও চোখ কলমের (বাডিং) মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়।

মে থেকে আগস্ট মাল্টা গাছের চারা/কলম লাগানোর উত্তম সময়। তবে বছরের অন্যান্য সময়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করা গেলে যে কোন সময় মাল্টার চারা/কলম লাগানো যাবে। চারা রোপণের জন্য ৭৫ সেমি দৈঘ্যে, ৭৫ সেমি’র প্রস্থ এবং ৭৫ সেমি গভীরতার ৩-৪ মিটার দূরত্বে গর্ত করে নিতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দেশের লেবুজাতীয় ফলের (মাল্টা, লেবু, কমলা, বাতাবি লেবু) অধিকাংশ চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। তবে চাহিদার কথা চিন্তা করে লেবুজাতীয় ফসল উৎপাদনে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নতুন করে আরও ৪০ হাজার টন মাল্টা এবং লেবুজাতীয় ফল উৎপাদিত হবে। এতে সরকারের আমদানি কমে সাশ্রয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

সংশ্নিষ্টরা জানান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, ইতালি, আর্জেন্টিনা, জাপান, গ্রিস, ইসরায়েল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে লেবুজাতীয় ফল উৎপাদিত হয়।  

বাংলাদেশ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ৩১৮ টন লেবু ও ২৩ হাজার টন বাতাবি লেবু রফতানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ১৩ কোটি টাকা। তাছাড়া বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৬ টন কমলা ও নয় হাজার ৮০১ টন মাল্টা আমদানি করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।
 
প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের সাত বিভাগের ৩০ জেলার ১২৩টি উপজেলায় বৃহৎ কিংবা ছোট পরিসরে লেবু বা মাল্টাজাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক নতুন প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে সম্পন্ন হবে। । প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিকভাবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধিরও কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে বছরে ৪০ হাজার টনের বেশি মাল্টা এবং অনান্য লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়বে। প্রকল্প এলাকায় ২০টি সরকারি নার্সারিতে লেবুজাতীয় ফলের মাতৃবাগান স্থাপন এবং চারা উৎপাদনের কাজ করা হচ্ছে। যে পুরনো পাঁচ হাজার বাগান আছে সেগুলোও এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হবে। এতে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কৃষকের আয়ও বাড়বে ১০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির পরিচালক ফারুক আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার সময় প্রচুর পরিমাণে মাল্টা-কমলা বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে। এর আগে থেকেই বিদেশি মাল্টা-কমলায় বাজার ভরে থাকে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে দেশি সবুজ মাল্টা ব্যাপক পরিমাণে বাজারে আসবে। ফলে বিদেশ নির্ভরতা কমবে। দেশি মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও অনেক মিষ্টি দামও কম।  

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফলের আবাদ হয়। এর মধ্যে লেবুজাতীয় ফলের আবাদ হয় মাত্র দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০২৩ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন হলে লেবুজাতীয় ফলের উৎপাদন বাড়বে প্রায় ২০ শতাংশ। যেহেতু আমাদের নিজস্ব বাগানে মাল্টা ও কমলা উৎপাদিত হবে। পাশাপাশি কমবে আমদানিনির্ভরতা।

প্রকল্প সম্পর্কে জানা যায়, প্রকল্পে পুরনো পাঁচ হাজার লেবু বাগান ছাড়াও বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ৫৪ হাজার নতুন লেবুগাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য দেশের ৫৯ হাজার ১০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রকল্পে বারি মাল্টা-১ ও ২, জারা লেবু, সিডলেস লেবু, কলম্বো লেবু, বারি বাতাবি লেবু-১/২ জাত ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকল্প সম্পন্ন হলে লেবুজাতীয় ফলের উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়বে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমলা, মাল্টা, লেবু এবং বাতাবি লেবুর উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টন। প্রকল্প শেষ হলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই চার জাতের লেবুর উৎপাদন দাঁড়াবে চার লাখ ৩৭ হাজার টনের বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ০৩, ২০২১
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ