বাগেরহাট: খুলনা ওয়াসার পাইপে বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। পাইপের কারণে পলি জমে নাব্যতা সংকটও তৈরি হয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে পাইপ অপসারণ করে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
যত দ্রুতই সম্ভব ভৈরব নদীর এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ।
২০১৯ সালের ৩০ জুলাই খুলনা মহানগরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য খুলনা ওয়াসা বাগেরহাটের মোল্লাহাটের মধুমতি নদী থেকে পানি নেওয়া শুরু করে। ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে পানি নেওয়ার জন্য বৃহদাকার পাইপ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি।
ফকিরহাটের ভৈরব নদী ক্রস করার সময় মাটির তলদেশ দিয়ে না নিয়ে পানির নিচ দিয়ে পাইপটি নেওয়া হয়। ফলে সাড়ে ৫ ফুট উঁচু ওই পাইপটি খালের অর্ধেক মেরে ফেলে।
পরবর্তীকালে এটিকে ঘিরে লোহার পাতের বেরিকেট দিয়ে নদীর চলাচল আটকে দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এমনকি এ নদী থেকে ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সতর্কতার সাইনবোড টাঙায় কর্তৃপক্ষ। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এমন অবহেলা, উদাসীনতা ও অপরিকল্পিত পাইপ লাইন স্থাপনের কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে নাব্যতা সংকট।
এছাড়া নদীতে পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে পানি জমে পচে যাচ্ছে খেতের ফসল। এছাড়া নদীর পানি আটকে মাছের ঘের ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ চাষিরা। সামান্য বৃষ্টিতেও পানি নামতে না পেরে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরও ডুবে যায় বলে জানা গেছে।
নদীর পাশে বসবাসকারী জামাল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, যখন নদীতে পাইপ বসানোর কাজ চলছিল, তখন আমরা সেটি মাটির গভীর দিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেই। কিন্তু তারা কথা শোনেনি।
নয়ন শেখ নামে এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, ওই পাইপের কারণে নৌকা চলাচল করতে পারে না। নদীপথে পণ্য পরিবহনে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। শিগগির ওয়াসার পাইপটি নদীর তলদেশ থেকে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ী শেখ মনি বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে বেরিকেট দেওয়া ও পাইপ থাকায় আমরা জলপথে খুলনা ও বাগেরহাট থেকে নৌযোগে মালামাল পরিবহন করতে পারছি না। সড়কপথে পরিবহনে খরচ হয় প্রায় দ্বিগুণ।
শুধু জামাল ও মনি নয় স্থানীয় আরও অনেকে বাংলানিউজকে জানান, নদীটি খনন করা হলেও পণ্যবাহী নৌযানগুলো চলাচল করতে পারে না। কেউ, কেউ না জেনে এ পথে এলে আটকে যান নদীতে। ফলে নদীতে নৌযান চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে। রাতের আঁধারে নৌকা চলাচলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিছুদিন আগে খনন করা গভীর নদীটি ইতোমধ্যে নাব্যতা হারিয়েছে।
মূলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বাংলানিউজকে বলেন, ওয়াসার পাইপের কারণে নদী খননের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। কাঁঠালতলা সেতুর এই স্থানটি থেকে পাইপটি মাটির তলদেশ থেকে পাইপটি নেল এখান থেকে পানি চলাচলও স্বাভাবিক হবে। জনভোগান্তি কমবে। এজন্য যত শিগগির সম্ভব এই পাইপটি মাটির তলদেশ থেকে নেওয়ার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।
এ ব্যাপারে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিষয়টি জানানো হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো এলাকায় এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি-না, সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সমস্যা সমাধানে কার্যক্রম শুরু করছি। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করবো, যেন ভবিষ্যতে সমস্যা না হয়। চলতি অর্থ বছরের মধ্যে পাইপটি নদীর তলদেশ দিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
এসআরএস/এসআরএস