ঢাকা: ‘যেদিন থেকে আমরা গরু-ছাগলের ভুড়ি খাওয়া শুরু করলাম এবং মরা গরু-ছাগল মাটিতে পুঁতে ফেলা শিখলাম তখন থেকে শকুন আর দেখা যায় না। পাশাপাশি হিমালয় পর্বতমালায় যখন বরফ গলা শুরু করলো তখন লোকালয়ে এসে অবস্থান নেওয়া শকুন মেরে ফেলে মানুষ।
বিশ্ব শকুন সচেতনা দিবস উপলক্ষে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাববুন নাহার, সচিব মোস্তফা কামালসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশনের সভাপতি ড. এসএম ইকবাল বলেন, যেদিন থেকে আমরা গরু-ছাগলের ভুড়ি খাওয়া শুরু করলাম এবং মাটিতে পুঁতে ফেলা শিখলাম তখন থেকে আর শকুন দেখা যায় না।
তিনি বলেন, আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি তারা পকেটের টাকা খরচ করে কাজ করি। সেজন্য আমাদের কাজগুলোর স্বীকৃতি দরকার।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন সংরক্ষক রেজাউল করিম, হিমালয় পর্বতমালায় যখন বরফ গলা শুরু করলো তখন উড়ে এসে লোকালয়ে স্থান নেয়। কিন্তু মানুষে মেরে ফেলা শুরু করে। কুকুর যেমন রোগ-জীবাণু ছড়ায় শকুন কিন্তু ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ রোগ ছড়ায় না।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, খাদ্য সংকটের কারণে শকুন বিলন হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।
পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, গরু থাকলেই শকুন খবর পাবে তা নয়। সংখ্যাও বেশি হতে হবে। একটা শকুন যখন নিচে নেমে যাচ্ছে তখন তাকে দেখে অন্যরা নিচে নেমে খাবার খায়।
পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা প্রাণিকূলকে নিরাপদে বসবাস করার মত পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারিনি। সে কারণে আজ শুধু শকুন নয় অন্য প্রাণীও হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাণিকূলকে হুমকির মুখে ফেলার জন্য মানুষ জাতি দায়ী। প্রাণিকূলকে রক্ষার জন্য আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, একটা গরু মারা গেলে শত শত শকুন ভক্ষণ করতো। আজকে সেই শকুন শূন্য হয়ে গেছে। ডাইক্লোফেনাক এবং কিটোপ্রোফেন ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা যেন সঠিকভাবে বন্ধ থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। গ্রামগঞ্জে যে ধরনের গাছ দেখেছি সেই ধরনের গাছও নেই। তাদের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। শকুনের আবাসস্থল সুন্দরবন এবং রেমা-কালেঙ্গা রক্ষা করতে হবে। সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গায় শকুনের প্রজনন সফলতা ৪৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
শকুনসহ প্রাণিকূল রক্ষায় কাজের স্বীর্কতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে সহযোগিতা থাকবে বলে জানান মন্ত্রী।
উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, স্বাধীনতার সময় প্রচুর শকুন দেখা গিয়েছিল। এখন আর ঝাঁক বেধে দেখা যায় না। সাধারণ মানুষের বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ সাধারণ মানুষ আহত বা অসুস্থ প্রাণী দেখলে যথাস্থনে পৌঁছে দিতে পারবে। শকুনের প্রজননকালে যেন মানুষ সেসব অঞ্চলে না যেতে পারে।
পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, খাবারের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা দরকার। শিকার করে খাবার খায় না, শকুন রেডি খাবার খায়। এটা নিয়ে গবেষণায় সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে। আমরা প্রাণী ধংসের যেন কারণ না হই, অবদান রাখতে পারি সেদিকে নজর রাখতে হবে।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ৯৯ শতাংশ শকুন থেকে হারিয়ে গেছে। ২৬০টি শকুন টিকে আছে। খাবার দেওয়া হয় সেখানে যাতে ক্ষতিকর ডাইক্লোফেনাক না থাকে। সেটি নিশ্চিত করছি।
তিনি বলেণ, বড় বড় গাছ কেটে ফেলায়, বিশেষ করে তালগাছ থেকে শকুন নামতো। তালগাছ লাগনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বর্জ্যপাত থেকে রক্ষাতেও কাজ করে।
প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, বন আইনে একটি ধারা সংযুক্ত করতে যাচ্ছি, পুরনো গাছ ইচ্ছে হলেই কেটে ফেলতে পারবে বা ইট ভাটায় দিতে না পারে। গাছটি কাটতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতির বিধান রাখা হচ্ছে। তাহলে গ্রামীণ জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এমআইএইচ/এএটি