ঢাকা, রবিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ঘর নির্মাণ, ডুবে গেছে ৬০০ বিঘা ফসলি জমি

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ঘর নির্মাণ, ডুবে গেছে ৬০০ বিঘা ফসলি জমি

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ফসলি জমির প্রধান কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ঘর নির্মাণ করায় পানিতে তলিয়ে গেছে একটি গ্রামের ৬০০ বিঘা ফসলি জমি। এতে করে শঙ্কায় পড়েছে ২০০ কৃষক পরিবার।

 

অন্যদিকে কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ায় একমুখী পানির চাপে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে থাকা একটি সেতুসহ দুইটি পুরাতন কালভার্ট প্রায় ভেঙে যাওয়ার অবস্থা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ফসলি জমির পাশাপাশি পানির চাপে ভেঙে পড়বে ডাহুক নদীর সুরক্ষা বাঁধের রাস্তা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

এদিকে স্থানীয়ভাবে কোনো সমাধান না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছে ওই গ্রামের ২০০ কৃষক পরিবার।

ঘটনাটি উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কালদাসপাড়া গ্রামে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কালদাসপাড়া গ্রাম রাস্তা সংলগ্ন কালদাসপাড়া ডাঙ্গী বস্তি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৪০-৫০ বছর আগে রাস্তার পশ্চিমাংশে সরকারিভাবে একটি সেতু/কালভার্ট করা হয়। কালভার্টটি প্রায় ৫০০-৬০০ বিঘা জমির ফসল ফলানোর সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়। এতে পানি সঞ্চালন ও নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থাসহ ফসল ফলানো সম্ভব ছিল। এ অবস্থায় হঠাৎ করে আবু বক্করের ছেলে অভিযুক্ত আমির হাজমা কালভার্টের পশ্চিমাংশে ইটের হাফ দালান উপরে টিনসেড দিয়ে মুরগির খামারের জন্য ঘর তৈরি করে কালভার্টটির মুখ বন্ধ করে দেয়। এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমির হাজমা উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করে। একই সঙ্গে বিষয়টি সমাধানে একাধিক বার বলা হলে তিনি স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। কোনো সমাধান না পেয়ে স্থানীয় ওই পরিবারের লোকেরা গত ১১ আগস্ট গণস্বাক্ষরিত এক অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করে।

স্থানীয় নুর মোহাম্মদ, মকবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমির হাজমা কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের এলাকাবাসীর প্রায় ৬০০ বিঘা জমিসহ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। সকলেই আমরা কালভার্টটির মুখ খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন আমির হামজা। আমরা স্থানীয় হিসেবে জমিসহ ফসল রক্ষায় প্রশাসনের মাধ্যমে কালভার্টটির মুখ খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

মামুন নামে আরেকজন বাংলানিউজকে বলেন, ফসলি জমির পানি যাওয়ার জন্য ওই কালভার্টটি প্রধান মুখ। কিন্তু সেটির মুখ বন্ধ করে দিয়ে ঘর তোলায় বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে গেছে স্থানীয়রা। ফসল তো পানিতে তলিয়ে গেছে, একই সঙ্গে একটি সেতু, পাশে থাকা দুইটি কালভার্ট ভেঙে পড়ার উপক্রম। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত সেই কালভার্টটির মুখ খুলে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি।

বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে অভিযুক্ত আমির হামজা বাংলানিউজকে বলেন, আমি আমার জমিতে ঘর তুলেছি। পাশে আমার বাড়ি। আমার বাড়ির জমি ক্ষতি হওয়ায় ঘরটি নির্মাণ করেছি।

অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্মা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কালভার্টের মুখ মালিকানা জমির মধ্যে পড়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। দুইপক্ষের লোক বিষয়টি সমাধানে একত্রে বসলে আশাকরি দ্রুত সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ