ঢাকা: আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিএনপি জাতির পিতা হিসেবে গ্রহণ না করা পর্যন্ত কোনো তর্ক-বিতর্ক বন্ধ হবে না। তবে বিএনপি গ্রহণ করুক আর না করুক ততে বঙ্গবন্ধুর কিছু যায় আসে না।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিএনপির সদস্য হারুনুর রশীদ ও আইনমন্ত্রীর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য শুরু হয়। আইন প্রণয়ন কার্যক্রম চলার সময় সংশোধনী, যাচাই-বাছাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও মন্ত্রীর বক্তব্যের সময় উভয়ে বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমির চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
হারুনুর রশীদের এক বক্তব্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তর্ক-বিতর্ক কীভাবে বন্ধ হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা জাতির পিতাকে জাতির পিতা হিসেবে গ্রহণ করবেন না। আপনারা গ্রহণ করেন আর না করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তাতে কিছু যায় আসে না। তার কারণ তিনি সত্যি সত্যি জাতির পিতা। বাঙালি জাতি সেটা জানে এবং বাঙালি জাতি সেটা ধরে রাখবে। সেখানে এই বিতর্ক চলবেই, যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিকে পাকিস্তানিকরণের উদ্দেশ্যে যে বিএনপির ছিল সেটা ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে না যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে আমার প্রশ্ন, যদি খুনি জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হতেন, কেউ কি তার হাতটা চেপে ধরেছিল যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না? কেউ কি তার হাতটা চেপে ধরেছিল যে, ২৬ সেপ্টেম্বর এই ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স পাস করা হয়েছে। এই অর্ডিনেন্স বাতিল করা যাবে না? এই রকম তো কেউ করে নাই। উনি এই বিচারটা করলেন না কেন? এই সংবিধান বলেন আর সংবিধান যদি নাও ধরেন এটা জনগণের সিআরপিসিতে অধিকার। কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিজিউরেও অধিকার যে একটা হত্যাকাণ্ড যদি সংঘটিত হয় বা একটা অপরাধ যদি সংঘটিত হয়, সে থানায় গিয়ে একটা এজাহার দায়ের করতে পারে। সেই অধিকারটুকুও হরণ করে নিয়েছিলেন ২১ বছর এটাও কারেক্ট করেন নাই। আর আজকে আপনি বিএনপির সংসদ সদস্য হয়ে বলছেন যে, এই তর্ক-বিতর্ক বন্ধ হোক।
আইনমন্ত্রী বলেন, উনি (হারুনুর রশীদ) বললেন গত শোকের মাসের যে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা কোথায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী তো এই সৎ সাহস দেখিয়েছেন যে, তিনি এটা প্রশ্ন করেছেন এবং তার মানেই তিনি এটা কগনিজেন্সি নিয়েছেন।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বিএনপির ব্যাপারে যেটা বলছেন, সেটা যদি সত্য হতো তাহলে আমি খুশি হতাম। সেই দিন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের এখন যে সম্পাদক। তিনি বিএনপি সমর্থিত একজন ভালো ক্যাডার। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, কালুরঘাটে সেই দিন যদি খুনি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিত এবং যদি গুলি না করত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ওপরে তাহলে স্বাধীনতা কোথায় থাকত সেটা তিনি উল্লেখ করেছেন। ইতিহাস নাকি অন্য রকম হতো।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা এখনো স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আমরা যেখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, সেখানে যারা এ রকম মিথ্যা কথা বলার ধৃষ্টতা দেখায়। তাদের কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে কেউ মনে করবে? উনি যেই কথাটা বলছেন, আমি আগেই বলেছি, উনি যদি এটা মনে মনে বিশ্বাস করে জাতিকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া বিএনপির কথাটা উনি বলতেন তাহলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু উনার এই যে বক্তব্য, এটা একচুয়ালি বিএনপির জাতিকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে, যেই ধোঁকা তারা এই বিএনপি যেদিন থেকে সৃষ্টি হয়েছে সেদিন থেকে দিয়ে যাচ্ছে। সেই ধোঁকা দেওয়ার জন্য আজকে আবারও পুনরাবৃত্তি করলেন।
এর আগে বিএনপির নেতা হারুনুর রশীদ তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১৫ আগস্টের ঘটনার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোথায় ছিল। অত্যন্ত আবেগঘন অবস্থায় তিনি এ কথাটা বলেছেন। সেদিন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, আওয়ামী লীগের এত নেতাকর্মী। কেউ তো বিদ্রোহ করে নাই। লাশ সৎকার না করে তারা শপথ নিয়েছিল। আমরা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দিতে চাই, হানাহানি বাড়াতে চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এসকে/জেএইচটি