ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বজ্রপাতের পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নতির পরামর্শ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
বজ্রপাতের পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নতির পরামর্শ ...

ঢাকা: শক্তিশালী রাডার ও স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বজ্রপাতের পূর্বাভাসের ব্যবস্থার উন্নতির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত 'বজ্রপাত' বিষয়ক জাতীয় সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শ দেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বজ্রপাতের মতো দুর্যোগে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের আটটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে। এ'টি সফল হলে জনসমাগম হয় এমন আরও বেশিসংখ্যক স্থানে লাইটনিং এরেস্টার বা বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হবে। তাছাড়া বজ্রপাতে যেখানে মৃত্যুর হার বেশি সেসব অঞ্চলে বজ্রপাত আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনদিন বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে এবং এতে হতাহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। তাই ভবিষ্যতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার আরো কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আব্দুল ওয়াহ্হাব। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ, আবহাওয়া অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা সেমিনারে অংশ নেন।  

মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহসীন বলেন, দুর্যোগে ঝুঁকি কমাতে জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও নিরাপদ দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল বক্তা হিসেবে 'বজ্রপাত কেন এবং কীভাবে' বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম আরশাদ মোমেন, 'বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচানো এবং সর্তকতা' বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জীবন পোদ্দার এবং ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফারুক আহমেদ অনুষ্ঠানে বজ্রপাতের মতো দুর্যোগে সর্তকতা ও করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বজ্রপাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আমাদের কিছু উপায় বের করতে হবে। যেমন, প্রথমেই বজ্রপাতের পূর্বাভাসের উন্নতি সাধন করতে হবে। বজ্রপাতের অন্তত ২০ মিনিট আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানতে পারবে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে। এ খবর মোবাইল ফোনে মেসেজ আকারে অথবা গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষায় কেবল আগাম সতর্কবার্তাই দেওয়া হয় না, তাদের সাইক্লোন শেল্টারে আনার ব্যবস্থাও নেয় সরকার। প্রয়োজনে পুলিশও মোতায়েন করা হয়। বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও এমন উদ্যোগ নিতে হবে। শক্তিশালী রাডার ও স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পূর্বাভাসের উন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাকৃতিক প্রতিরোধ হিসেবে খোলা জায়গায় তাল গাছ, নারকেল গাছ, সুপারি গাছ, বটগাছ ইত্যাদি দ্রুত বর্ধনশীল উঁচু গাছ রোপণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ বক্তাগণ আরো বলেন, আকাশে ঘন-কালো মেঘ দেখা দিলে বজ্রপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট বজ্রপাত স্থায়ী হয়। এ সময়ে ঘরে অবস্থান করাই ভালো। খুব প্রয়োজন হলে রাবারের জুতা পায়ে দিয়ে বাইরে যাওয়া যেতে পারে। বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে অবস্থান করা যেতে পারে। এ সময়ে ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়তে হবে। খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যেতে হবে। খোলা জায়গায় কোনো বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। গাছ থেকে ৪ মিটার দূরে থাকতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। উঁচু গাছপালা, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটানো যাবে না। সম্ভব হলে গাড়ি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকা যাবে না। বাড়ির জানালা বন্ধ রাখতে হবে এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকতে হবে। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা যাবে না, প্রয়োজনে প্লাস্টিকের অথবা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে হবে। খোলা মাঠে খেলাধুলা করা যাবে না। বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরা যাবে না, তবে এসময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাওনির ভেতরে অবস্থান করতে হবে। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, ধাতব পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এমআইএইচ/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।