ঢাকা: সারাকা থেকে তাজরীন গার্মেন্টস, স্পেকট্রাম থেকে রানাপ্লাজায় শ্রমিকদের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলছে একের পর এক। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ জন শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হন। এই অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে দৃক পিকচার লাইব্রেরি ‘হাসেম ফুডসে ঝলসানো প্রাণ’ শিরোনামে রাজধানীর পান্থপথের দৃক গ্যালারিতে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় দৃক পিকচার লাইব্রেরির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, শিল্পী ও সংগঠক বীথি ঘোষ এবং দৃকের আলোকচিত্রীদের পক্ষ থেকে ছিলেন শহিদুল আলম এবং সুমন পাল।
হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ঘটনার পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। বলেছেন যে, এটা একটা হত্যাকাণ্ড এবং এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সেই তদন্ত কমটি এখন কোথায়? সেই হত্যাকারীরা এখন কোথায়? আজ ৪ সেপ্টেম্বর, কোথায় সেই তদন্ত প্রতিবেদন? এসব প্রশ্ন তোলা যাবে না, তাহলে জেলে যেতে হবে।
নাগরিক তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য বীথি ঘোষ বলেন, যারা মারা গেছে, দিন শেষে এই মানুষেরা শুধুই সংখ্যা। সেখানেও লুকোচুরি চলে, টানাহেঁচড়া চলে। সবাই জিজ্ঞেস করে, ৫২ জন মারা গেছে, আপনারা ৫৪ বলছেন কেন? কিন্তু আমরা কথা বলেছি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে, পরিবারগুলো দাবি করেছে মালিকপক্ষ তাদের টাকাও দিয়েছে। তারপরও কি প্রমাণ খুব বেশি জরুরি!
শহিদুল আলম বলেন, আজ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, এমন দিনে উৎসব হয়, কেক কাটা হয়। আমরা প্রতিবাদী একটি প্রতিষ্ঠান, তাই ভিন্নভাবে দিবসটি পালন করতে চেয়েছি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে কলকারখানায় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার ও বিচার ব্যবস্থার চলমান উদাসীনতাকে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই।
আলোকচিত্রীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুমন পাল। অগ্নিকাণ্ডের ছবি তোলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মাতৃহারা শিশুর যখন ছবি তুলতে যাই, তার মুখের দিকে তাকাতে পারি না, স্তব্ধ হয়ে যাই।
প্রদর্শনীটি আয়োজিত হচ্ছে হাসেম ফুডসের অগ্নিকাণ্ড চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে দৃকের আলোকচিত্রী সুমন পাল, ইশতিয়াক করিম, পারভেজ আহমেদ ও শহিদুল আলমের তোলা ছবি নিয়ে। প্রদর্শনীতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হিসেবে রয়েছে ভুক্তভোগী ৫৪ জন শ্রমিকের ছবি, গল্প ও তাদের ব্যবহৃত কিছু জিনিস।
হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডে যে সকল শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জীবনকথা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটও চালু করা হয়েছে প্রদর্শনীতে। কোভিড-১৯ এর সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রদর্শনীটি ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
এইচএমএস/কেএআর