পটুয়াখালী: সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি খ্যাত পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের ১২ কিলোমিটার এলাকা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। অব্যাহত ভাঙন এবং দায়সারা উন্নয়নে দিন দিন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে সৈকতটি।
চলতি বর্ষায় সাগরের তীব্র ঢেউয়ে বালুক্ষয় হয়ে এর পরিধি কমছে। ভাঙনের কবলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক, কুয়াকাটা ইসলামিয়া মাদরাসা পয়েন্ট, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্পট। এরইমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে দর্শনীয় স্থান নারিকেল বাগান ও জাতীয় উদ্যান। সৈকত চলে এসেছে কুয়াকাটা চৌমাথার ২০০ ফুটের মধ্যে। এ অবস্থায় প্রতি বছর ভাঙন থেকে সৈকত ও মূল বেড়িবাঁধ রক্ষায় অর্থ ব্যয় করা হলেও তা খুব বেশি কাজে আসছে না।
অপরদিকে, টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নতুন করে ৯৪৯ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে। তা কতটুক বাস্তবসম্মত এবং টেকসই হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কুয়াকাটা সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটা ও অব্যাহত বালু ক্ষয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার সৈকত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় গাছের মূল থেকে বালু সরে গিয়ে বনাঞ্চলের পাশে উপড়ে পড়ে আছে অসংখ্য গাছ।
গত দুই বছর সৈকতের জিরো পয়েন্টের দু’পাশে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ফেলে তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় পাউবো। তবে বর্তমানে এসব জিও ব্যাগ সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা বিমুখ করছে পর্যটকদের।
যেহেতু কুয়াকাটায় প্রায় ১২ কিলোমিটারের সৈকত ছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো তেমন কোনো স্থাপনা নেই, তাই ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সৈকতের স্থায়ী এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানির লেয়ার বাড়লে সৈকতে বালু ক্ষয় শুরু হয়। পাউবো প্রতি বছর অস্থায়ী প্রকল্পে টাকা খরচ করে। এগুলো বিচ রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কোনো কাজে আসে না। বরং এতে আরও সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আমাদের দাবি- দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের মাধ্যমে কুয়াকাটা রক্ষা করা হোক।
এদিকে, ২০২০ সালে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) একটি সার্ভে করে পাউবোকে একটি প্রতিবেদন দেয়। সেই প্রতিবেদন ও তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, পাউবো ৯৪৯ কোটি টাকার একটি ডিপিপি প্রণয়ন করেছে। এতে সৈকতের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় ১৪০ মিটার পর পর ৭০ মিটার দীর্ঘ ৬৮টি গ্রোয়েন বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব বাঁধ সাগরের পাড় থেকে সাগরের দিকে করা হবে। এছাড়া বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা রাখা হয়েছে ডিপিপিতে।
তবে ৯৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরির কাজ চলমান থাকলেও তা আদৌ কুয়াকাটার সৌন্দর্য রক্ষা করে ভাঙনরোধ করতে পারবে কি-না সে বিষয়ে কোনো পাইলটিং কাজ করা হয়নি। ফলে এর সফলতা ও বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কীভাবে সৈকত রক্ষা করা হবে সেটি সরকার বিবেচনা করবে। তবে আমরা দীর্ঘদিন থেকেই গ্রোয়েন বাঁধের কথা বলছি। সেটা ৩/৪ টির বেশি নয়। পুরো সৈকতে যদি ৬৮টি গ্রোয়েন বাঁধ করা হয়, তবে কুয়াকাটায় আর সৈকত থাকবে না। এটা কংক্রিটের সৈকতে পরিণত হবে।
পাউবো পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সালেহী বাংলানিউজকে বলেন, আইডব্লিউএম সার্ভে অনুযায়ী ৯৪৯ কোটি টাকার একটি ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে সৈকতের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় ১৪০ মিটার পর পর ৭০ মিটার দীর্ঘ ৬৮টি গ্রোয়েন বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
এনএসআর