ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুল খোলার খবরে খুশি শিক্ষার্থীরা, ব্যস্ততা সংশ্লিষ্টদের

  মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
স্কুল খোলার খবরে খুশি শিক্ষার্থীরা, ব্যস্ততা সংশ্লিষ্টদের

গাইবান্ধা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে টানা দেড় বছর ঘরবন্দি থাকা শিক্ষার্থীরা খুশি হলেও শঙ্কাবোধ করছেন অভিভাবকরা। শিশু-কিশোরদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তারা।

 
 
এদিকে, সরকার ঘোষিত ১২ সেপ্টেম্বরের আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) গাইবান্ধার  বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের পদচারণা না থাকায় বিদ্যালয়গুলোর আনাচে-কানাচেসহ পুরো মাঠ ভরে গেছে ঘাস-আগাছায়। দেয়াল ছেয়ে গেছে মাকড়ার জালে। টেবিল-চেয়ারে জমেছে ধূলো-ময়লার আস্তরণ।  
 
জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় মাঠের ঘাস গুলো বেড়ে উঠেছে স্বাধীনভাবে। ঘাসগুলো এতটা বেড়ে উঠেছে যে মৃদু বাতাসেই দোল খাচ্ছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষের দেয়াল-ছাদ ছেয়ে গেছে মাকড়সার জালে, টেবিল-চেয়ারে জমেছে ধূলোবালুর পুরু আস্তরণ। বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী বেলাল সেসব পরিষ্কার করছেন যত্নের সঙ্গে।
 
বিদ্যালয়ে উপস্থিত প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকগণ। তারাও দিক-নির্দেশনাসহ বিদ্যালয় খোলাকে কেন্দ্র করে নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাহেদার রহমান সরকার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত মাসের ২৩ তারিখ থেকে শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছেন। আগামী ১২ তারিখ থেকে বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান জীবাণুমুক্তকরাসহ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য দুটি করে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে মাঠের ঘাস পরিষ্কার করা হবে। এছাড়া বেঞ্চগুলোতে নতুন করে রং করা হচ্ছে।
 

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ কবির জানান, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ২১৬টি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয় খেলার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে শিক্ষক-কর্মচারীরা বিদ্যালয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছেন। উপজেলার মোট ২১৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৮৬টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছে। সার্বিক পরিবেশ সন্তোষজক। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কোভিড সুরক্ষাসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। আমাদের বড় কোনো সমস্যা নেই।
 
এদিকে, দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খোলার ঘোষণায় খুশি শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। পাশাপাশি আছে উদ্বেগও। উপজেলা সদরের পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার ও বঙ্গবন্ধু বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সকাল জানায়, স্কুল খুলছে জেনে অনেক আনন্দ হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর সহপাঠিদের সঙ্গে দেখা হবে। একসঙ্গে পড়াশুনা-খেলাধুলা অনেক মজা হবে।  

বিদ্যালয় খোলার খবরে খুশি সাদিয়ার বাবা ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান স্বপন ও সকালের বাবা প্রতিবেশী সাজু মিয়াও। সেইসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, কোমলমতি শিশুরা দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর বিদ্যালয়মুখী হবে এটা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে যেহেতু বাচ্চাদের টিকার আওতায় আনা হয়নি। তাই করোনার কারণে মনে একটা আতঙ্ক-উদ্বেগ কাজ করছে।
 
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) হোসেন আলী বাংলানিউজকে জানান, জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা-১ হাজার ৪৬৬টি। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১২ তারিখ থেকে বিদ্যালয় খেলার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে সদরসহ প্রতিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বিদ্যালয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছেন। নিয়মিত কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করা হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কোভিড সামগ্রী মাস্ক-স্যানিটাইজার মজুদ রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।