ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে নদী ভাঙনে ঝুঁকিতে পাঁচটি বিদ্যালয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
ফরিদপুরে নদী ভাঙনে ঝুঁকিতে পাঁচটি বিদ্যালয় স্কুলের কাছে চলে এসেছে নদী।

ফরিদপুর: ফরিদপুরে তীব্র নদী ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী অন্তত পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে স্কুলগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা ও মধুমতীর ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা স্কুল পাঁচটি হচ্ছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার বাজরা চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম চর নারাণদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের বালিয়াডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লাহ শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামের সবুল্লাহ শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীন জানান, ‘বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত। এরপর নতুন একতলা ভবন নির্মাণ হয় ২০১৪ সালে। বিদ্যালয়ের ভবন থেকে নদী এখন ৫ গজ দূরে অবস্থান করছে। যেকোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি।  

একই ঝুঁকিতে থাকা পশ্চিম চরনারাণদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নব খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ১৯৮০ সালে স্থাপিত। এরপর ১৯৯৩ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টির টিনশেড ভবন থেকে নদী মাত্র ৩ হাত দূরে অবস্থান করছে। আর একতলা ভবন থেকে ২০ হাত দূরে রয়েছে নদী। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবার আর বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার জানান, ১৯৩৫ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত। এরপর ২০১০ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টি থেকে মাত্র ৪০ হাত দূরে অবস্থান করছে মধুমতি নদী। এ বছর নদী যেভাবে ভাঙছে এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে টগরবন্দ, গোপালপুর ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন। টগরবন্দ ইউনিয়নের চাপুলিয়া, আজমপুর, চর আজমপুর ও চরডাঙ্গা, গোপালপুরের গোপালপুর, দিক নগর, কাতলাসুর ও খোলাবাড়িয়া, পাচুড়িয়ার বাঁশতলা, পাঁচুরিয়া ও চাঁদরা গ্রামগুলোতে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে হুমকিতে রয়েছে এসব এলাকার মানুষ।  

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান বলেন, তার ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫০টি ভিটাবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া দুই একর ফসলি জমি ভেঙে গেছে।  

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত দুর্গতদের জন্য কোনো ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ইকু বলেন, মধুমতি নদী তীর ভাঙতে ভাঙতে বাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এরইমধ্যে স্কুল-সংলগ্ন পাকা রাস্তাটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। নদী থেকে স্কুলের দূরত্ব মাত্র তিন-চার মিটার। দ্রুত এ ভাঙন রোধ করা না গেলে স্কুলটি যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নে অন্তত ১৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের হাজিডাঙ্গী ভাঙ্গার মাথায় সলেমান শিকদারের বাড়ি-সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। ওই এলাকার ৫০ মিটারব্যাপী এলাকাজুড়ে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, পানি বাড়ার সঙ্গে জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন রোধে কাজ চলছে। প্রয়োজনে নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙনপ্রবণ স্থানে আবারও জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার জানান, আপদকালীন বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়গুলো রক্ষা করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।