ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ সংযোগের কারণে গাজীপুরে গ্যাসের চাপ কম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
অবৈধ সংযোগের কারণে গাজীপুরে গ্যাসের চাপ কম

গাজীপুর: গাজীপুর কয়েক হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে। যে কারণে লাখ লাখ মানুষের বসবাস এখানে।

অধিক মানুষের বসবাস হওয়ায় এ অঞ্চলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাসাবাড়ি। আর এসব বাসাবাড়িতে দেওয়া হচ্ছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। ফলে শিল্প-কারখানার গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে  উৎপাদন।

টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় দালালরা অবৈধ গ্যাস সংযোগে সহযোগিতা করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরাও এ কাজে জড়িত। প্রতি মাসেই অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের মাসোহারা নিচ্ছে তারা। আর এসব টাকা ভাগ হয় তিতাস গ্যাসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, কথিত সাংবাদিক, পুলিশ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। কেউ টাকা দিতে আপত্তি জানালে গ্যাস কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

স্থানীয়দের দাবি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও তারা অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

অনেকেই দালালের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে রাইজার কিনে নিচ্ছে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকায়। জরুন এলাকায় সরকারি জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা ও বাড়িঘর উচ্ছেদ করেছে সরকার। সেখান থেকে কিছু গ্যাসের রাইজার কিনে নেয় কাজল মিয়া, রহমান মিয়া, শিশির মিয়া ও উজ্জ্বলসহ কয়েকজন।  জরুন স্পিনিং মিলের বিপরীত পাশে থাকা বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে সে রাইজার। প্রতিটি রাইজারের জন্য তাদের দিতে হয়েছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এসব টাকা নিচ্ছে তিতাস গ্যাস কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় দালালরা।

কোনাবাড়ী থানা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের গ্যাসের চাপ কম থাকে। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে অনেকেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

কবির হোসেন নামে একজন বাংলানিউজকে জানান, যারা প্রতিমাসে তিতাস গ্যাস অফিসে টাকা দেয় তাদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় না। যারা টাকা দেয় না, কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

বাচ্চু মিয়া নামের একজন বাংলানিউজকে জানান, অনেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়া রাইজার কিনে এনে নিজেদের বাসায় লাগিয়ে নিচ্ছে। এতে দুই থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে তাদের। এভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বৈধ না অবৈধ তা জানিনা। তিতাস গ্যাস অফিসের লোকজনকে জানিয়েই এসব গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

কোনাবাড়ীর বাইমাইল এলাকার নিটটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার মো. রেজা জানান, মাঝে মাঝে গ্যাসের চাপ কমে যায়। তখন কিছু মেশিন বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ দিয়ে  মেশিন চালানো হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। কারখানায় বর্তমানে কাজ ভালোই হচ্ছে, উৎপাদনও ভালো। তবে গ্যাস নিয়েই একটু সমস্যা হয়।

গাজীপুরের জরুন এলাকায় অবস্থিত কেয়া স্পিনিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সব সময় গ্যাসের চাপ থাকে না, তখন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মেশিন চালানো হয়। এতে খরচ অনেক বেশি।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কালিয়াকৈর চন্দ্রা জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক মামুনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এক জায়গা থেকে রাইজার নিয়ে আরেক জায়গায় ব্যবহার করা অবৈধ। যদি জমিসহ রাইজার বিক্রি করা হয় সে ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন করা যায়। তবে রাইজার স্থানান্তর করা বৈধ নয়।

তিনি আরও জানান, গ্যাস অফিসের কেউ অবৈধ কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১।  
আরএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।