বরিশাল: বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালের মধ্যে এবারেও চলছে দুর্গাপূজার আয়োজন। তবে সংক্রমণ কম থাকায় ধকল কিছুটা সামলে এবারের পূজার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আয়োজকরা।
বর্তমান সময়ে বরিশাল নগরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে মৃৎশিল্পীরা ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে প্রতিমা তৈরিতে বিগত সময়ের থেকে বাজেটের অর্থ কমায় কিছুটা হতাশা তারা।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রতিমা তৈরির বাজেট অর্ধেকে নেমে গেছে জানিয়ে শংকর মঠ পূজামণ্ডপে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণকারী শিল্পী সুমন পাল বলেন, অর্থাভাবে অনেক জায়গাতে গত বছর পূজাও বন্ধ হয়ে গিয়ছিল। কাজের চাপ কম ছিল, তবে এবারে কাজের চাপ কিছুটা থাকালেও প্রতিমা তৈরির বাজেট বাড়েনি। যেখানে করোনার আগে লাখ টাকাতেও প্রতিমা নির্মাণ করতাম এখন তা স্বল্প খরচ নিয়েই করতে হচ্ছে।
তবে ধর্মীয় আয়োজনে অর্থের থেকে কাজের মান ভালো করার দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পূজামণ্ডপ ফলপট্টির প্রতিমাশিল্পী নিতাই চন্দ্র পাল।
তিনি বলেন, মালামালের দাম না কমলেও পূজার আয়োজক কমিটিগুলো তাদের বাজেট কমিয়ে ফেলায় আমরা বিপাকে পড়েছি। তার ওপর ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এতে কোনো ধরনের অবহেলা করারও সুযোগ নেই।
শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিমন কৃষ্ণ সাহা কানু বলেন, আমাদের পূজা সার্বজনীন, ভক্তদের অনুদানের ওপর পূজার ব্যয় নির্ভর করে। করোনাকালে অনুদান বাজেট অনুযায়ী না আসায় ব্যয়ও কমিয়ে আনতে হচ্ছে।
তারপরও উৎসবের আয়োজন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবধরনের কাজ চলছে, ষষ্ঠি বিহিত পূজার দিন মণ্ডপ উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কিশোর কুমার দে।
এদিকে বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তমাল মালাকার জানান, বরিশাল মহানগরে গত বছরের তুলনায় দু’টি পূজা বেড়ে মোট ৪৫টি পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ব্যক্তিগত। আর যে দু’টি দুর্গা পূজারমণ্ডপ বেড়েছে সেই দু’টিই নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এছাড়া জেলায় গত বছরের তুলনায় ১৫টি পূজা বেড়ে ৫৯০টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
অনুদান কম আসায় বাজেট কমলেও কোনো মণ্ডপে পূজার আয়োজনে কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তিনি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে পূজার আয়োজনে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিও নজরদারিতে থাকবে জানিয়ে পূজা আয়োজন নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, দুর্গাপূজাকে ঘিরে মেট্রোপলিটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিয়মানুযায়ী নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি পূজা কমিটিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়েই পূজার আভাস শুরু হবে সবার মধ্যে। এরপর ১১ অক্টোবর ভোরে দুর্গা দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সায়ংকালে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা, ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী বিহিত পূজা, ১৪ অক্টোবর মহানবমী বিহিত পূজা ও ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
এমএস/আরবি