ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুনর্বাসনেও কাজ হয়নি, ফের বেদখল ফুটপাত

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
পুনর্বাসনেও কাজ হয়নি, ফের বেদখল ফুটপাত

সিলেট: নগরের ভাসমান হকারদের পুনর্বাসনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সে দাবিও পূরণ হয়।

প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে হকারদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসার ব্যবস্থা করে দেয় নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জলে গেল পুনর্বাসনের জন্য ব্যয়িত অর্থ। হকাররা আবারও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেছেন।

নগরের লালদিঘীরপাড়ে হকারদের জন্য গড়া শেড এখন খালি পড়ে থাকে। নগর কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফুটপাত দখল করে রেখেছেন হকাররা। ফুটপাতে বসা নিষেধ সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও তা আড়াল হয়ে যায় সাজানো বাহারি পসরায়। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অফিস-আদালত, মার্কেট-দোকান এমনকি নগরভবনের সামন জুড়ে বসে ফুটপাত।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগর ভবনে ফটকের দুই ধারে ফুটপাত ও রাস্তায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকে হকারদের দখলে। পাশেই কুদরত উল্লাহ মার্কেটের প্রতিটি দোকানের সামনে অস্থায়ীভাবে পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। এর পাশেই বন্দরবাজার ফাঁড়ি, আদালত পাড়া, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের বাসভবনের ফটক, জেলা পরিষদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ফুটপাত ও সড়ক নিত্যদিন চলে যায় হকারদের দখলে।

আর নগরভবনের ফটকের বাম পাশের ফুটপাত থাকে তালা-চাবি মেরামতকারীদের দখলে। একটু দূরে সিটি মার্কেটের প্রতিটি দোকানের সামনের সড়কে এবং প্রধান ডাকঘরের সামনে বসে কাঁচাবাজার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট হকারদের দখলে থাকে নগরের ব্যস্ততম বন্দরবাজার সড়কের দু’পাশ। সন্ধ্যার পর ফুটপাত থেকে অর্ধেক রাস্তার দখল নেন হকাররা। ফলে মানুষ চলাচল দূরে থাক, রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যার ভোগান্তি আসে নগরের বাসিন্দাদের চলাচলে।

এছাড়া নগর ভবনের সম্মুখে হাসান মার্কেটের প্রতিটি দোকানের সামনের ফুটপাত, এমনকি সড়ক দখল করে ফল মার্কেট ও জুতা-কাপড়ের বাহারি ব্যবসা চলে। সড়কের অপরপাশের ফুটপাত কাপড় ও জুতাসহ হরেকরকম ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে দখল করে নেন। আর সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড দিয়ে দখলে রাখায় পথচারিদের চলাচল দুষ্কর।   

অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়ীরা খণ্ডকালীন দৈনিক টাকা আদায়ের নিমিত্তে নিজ দোকানের সামনের অংশে হকারদের ভাড়া দিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে নগর কর্তৃপক্ষ অভিযানে গেলে শুরু হয় চোর-পুলিশ খেলা। দখলদার দোকানিরা দ্রুত নিজের পণ্য গুটিয়ে নিতে পারলেও ভাসমানদের প্রাণপণে দৌড়াতে হয়। অভিযান শেষ হলেই ফের দ্রুত সহাবস্থানে ফিরে যান হকাররা। এদিকে হাঁটতে গেলে প্রায়ই গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগে নারী-পুরুষ সকলের।

নগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফটক দখল করে বসা হকারদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছুটি হলে সড়কের পাশে অবস্থান করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। অস্থায়ী পসরা নিয়ে বসা যুবকদের ইভটিজিংয়ের কবলে পড়েন ছাত্রীরা। ইচ্ছে করে গায়ে ধাক্কা দিয়ে বেখেয়াল থাকার বাহানা করতে দেখা যায় বখাটে যুবকদের। ঝামেলা এড়াতে অভিভাবকদের কাছেও নালিশ করেন না।

নগরের কোর্ট পয়েন্টের পাশেই দুর্গাকুমার পাঠশালার ফটক কোনোদিন দখল মুক্ত হতে দেখা যায় না। একই অবস্থা রাজাজিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের।     

 নগরের সর্বত্র বিরাজমান হকার সমস্যা। কোথাও কাঁচাবাজার, কোথাও জুতার দোকান, কাপড়ের দোকানসহ বাহারি পণ্যের মেলা বসিয়ে শুরু হয় হাকডাক।

নগর কর্তৃপক্ষ বলছেন, নগরের সবস্থানে ফুটপাত দখল করে বসছেন হকাররা। নগরের কর্তৃপক্ষের একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব না। এরজন্য প্রয়োজন নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ভবনের এক কর্মকর্তা বলেন, ফুটপাত থেকে হকারদের তাড়াতে প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযানে মালামাল জব্দ করা হলেও ছাড়িয়ে নিতে ফোন আসে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অনেকের।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিগত দিনে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। প্রভাশালীদের তালিকাও চেয়ে নিয়েছেন আদালত। কিন্তু অভিযানের পর অভিযান চালিয়েও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয় না।

নগরের জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, লামাবাজার, রিকাবীবাজার, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, ওসমানী মেডিক্যাল এলাকা, সুবহানীঘাট, মদিনা মার্কেটসহ সিলেট মহানগরীর প্রায় প্রতিটি বড় রাস্তা সংলগ্ন মার্কেটের দোকানদাররা ফুটপাত দখল করে পণ্য সাজিয়ে রাখেন।

ভাসমান ব্যবসায়ী বা হকারদের ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশন যতটা কঠোর, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই উদাসীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বলেন, মার্কেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে নিজেদের পণ্য রাখছেন। তাই ফুটপাত ধরে হাটা মুশকিল। একটু একটু দখল করে তারাতো পুরো নগরীতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের কনজারভেটিভ অফিসার হানিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে প্রতিদিন অভিযান চলছে। সরঞ্জামাদিও জব্দ করে নিয়ে আসছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। উপরন্তু ছেড়ে দিতে সুপারিশ আসে। ফুটপাত দিয়ে এখন সত্যি হাঁটাচলা মুশকিল। এটি নাগরিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে নাগরিক আন্দোলনের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এনইউ/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।