ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

৬০ টাকার বিস্কুটের জন্য মারধর, চিকিৎসায় খরচ ৫ হাজার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
৬০ টাকার বিস্কুটের জন্য মারধর, চিকিৎসায় খরচ ৫ হাজার

বরিশাল: বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ৬০ বিস্কুট চুরির মিথ্যা অপবাদে মারধরের শিকার হয়ে অষ্টম শ্রেণির এক মাদ্রাসার ছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসা করাতে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।

সেই টাকা ফেরত না চাইলেও শিশুটিকে মারধরের ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

এদিকে পুলিশ বলছে, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহত ওই স্কুলছাত্রের নাম আবদুল্লাহ আল জিদান (১৩)। সে বর্তমানে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। জিদান মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়নের গারুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মামুনুর-অর-রশিদের ছেলে এবং স্থানীয় আলীমবাদ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

আহত আল জিদানের বাবা মামুনুর-অর-রশিদ বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে আজিম নামে এক শিশু কয়েক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়ে। তখন তারা আজিমের কাছে জানতে চায় তুমি বিস্কুটগুলো কোথা থেকে চুরি করছো। এ সময় আজিম তাদের জানায় উপজেলার বান্দেরপাড় (বাধেরপাড়) এলাকার ইউসুফ ও ফারুক সিকদারের দোকান থেকে বিস্কুট গুলো নিয়েছে। তখন তাকে স্থানীয়রা বেঁধে রাখে এবং মারধরের ভয়ভীতি দেখিয়ে চুরির সঙ্গে আমার ছেলে জিদান জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় দোকান মালিক। তবে আমার ছেলের সঙ্গে আজিমের ভালো সম্পর্ক থাকলেও সে চুরির সঙ্গে জড়িত নয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পর বাসা থেকে জিদানকে লোক পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে যান ইউসুফ। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকেও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেন ইউসুফ। পরে চুরির বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আজিজুল হক আমাকে কল করে জানালে, আমি তাকে দুইদিন পর ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে বিচার করার আশ্বাস দেই। তবে এর আগেই পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় নুরুল আলম টগর নামে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে মারধর করেন। তার দেওয়া থাপ্পড়ের আঘাতে আমার ছেলের ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসায় ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ বিষয়ে দোকান মালিক ইউসুফ সিকদার জানান, গত মাসখানেক ধরে আমার দোকান থেকে বিস্কুট চুরি হচ্ছিলো। এ ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আজিমকে ১০ টাকা দামের ছয় প্যাকেট বিস্কুটসহ স্থানীয়রা আটক করে আমাকে খবর দেয়। পরে আজিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে চুরির সঙ্গে জড়িত জিদানের নামও জানায়।

তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় আজিমের হাত ধরে তাকে রাখা হয়েছিল, বেঁধে রাখা হয়নি। এমনকি তাকে মারধরও করা হয়নি। তবে এ সময় নুরুল আলমের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হওয়ায় জিদানকে তিনি থাপ্পড় দিতে পারেন। কিন্তু পরে জিদানকে তার নানার কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সে স্বাভাবিক ছিল। এ ঘটনার পর সে মাদ্রাসাতেও গেছে, আর এখন শুনছি তার চোখে সমস্যা হয়েছে।

এদিকে ইউপি সদস্য আজিজুল হক জানান, এ ঘটনার বিচার অভিভাবকরা করবে এমনটা ভেবে তিনি জিদানের বাবাকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানান। তবে তিনি ঢাকায় থাকায় দুদিন পরে এসে বিচার করবেন বলে আমাকে জানান।

যদিও এর মধ্যে নুরুল আলম টগর জিদানকে থাপ্পড় দেন। পরে জানতে পারি তার চোখে আঘাত পেয়েছিল।

এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো শফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখনও কেউ থানায় অবগত করেননি। তবে যেহেতু বিষয়টি শুনেছি তাই খোঁজ নিয়ে এবং তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।