টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া ইউনিয়নের পাঁচটিকড়ি গ্রাম। শুধু এ গ্রাম নয়, পুরো উপজেলায় নেই কোনো নদী ভাঙন।
তবু এ লোকেরপাড়া ইউনিয়নে তিন কোটি ৬২ লাখ এক হাজার ৯৯৪ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের ‘ফ্ল্যাড সেন্টার’।
তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
তারা বলছেন, বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকা না হলেও যেহেতু এ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সেহেতু এটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, পাঁচটিকড়ী দাখিল মাদরাসা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার মেসার্স এ আর ইন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট। আর এটি শেষ করার সময় ২০২২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৬২ লাখ এক হাজার ৯৯৪ টাকা।
সরেজমিন পাঁচটিকড়ী দাখিল মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয় কেন্দ্রের কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে। এ কারণে গত এক বছরে মাত্র ১০/১২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে নিচের ভিমের কাজ। সেখানে কাজ করছেন চারজন রড মিস্ত্রি।
কথা হয় আলামিন নামে এক মিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি জানান, গত আগস্ট মাস থেকে তারা এখানে কাজ করছেন। তবে ঠিকাদাররা যেভাবে তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন, তাতে করে এখনো দেড় থেকে দুই বছর লাগবে নির্মাণ কাজ শেষ হতে।
চুক্তিপত্র ও টেন্ডার ডকুমেন্ট অনুযায়ী ইট, বালু, খোয়া/পাথরকুচি, রড ও সিমেন্টসহ অন্যান্য মালপত্রের গুণাগুণ নির্মাণ স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। এছাড়া ভিত্তির কাজ পাইলিং, রড বাইডিংসহ অন্যান্য সব কাজে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি থাকছেন না। আর এ সুযোগে ঠিকাদার তার ইচ্ছেমত নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
এছাড়া নির্মাণ স্থানে (সাইটে) নেই কোনো মিক্সচার মেশিন রাখার ব্যবস্থা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, এখানে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করার বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকে দেরিতে জানিয়েছে। এরপর ঠিকাদার একদিন কাজ করলে দুইদিন বন্ধ রাখেন নির্মাণ কাজ। এছাড়া সাইটে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যাও অনেক কম। মাঝে মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিলে তারা শ্রমিকের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। দুই/তিনদিন পর আবার আগের মতোই শুরু করে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলে তিনি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। এছাড়া আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ঠিকাদার সময় নিয়েছেন নিচের গ্রেড ভিমের ঢালাইয়ের জন্য।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি মাত্র এক মাস হলো এখানে এসেছেন। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে জানানো যাবে।
ঠিকাদার মো. রনি জানান, তাদের সমস্যার কারণে গত বছর কাজ করতে পারেননি। এ বছর তারা কাজ শুরু করেছেন।
নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হবে না বলে স্বীকার করে তিনি জানান, কাজের মেয়াদ আরো সাত/আট মাস বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে। তবে ২০২২ সালেই কাজ শেষ হবে। এছাড়া এ কাজে কোনো অনিয়ম বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১
এসআই