পিরোজপুর: নাম সবুজ। তার দুটি কিডনিতেই সমস্যা।
অসুস্থ সবুজের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ডা. সাকিল সরোয়ার নামে এক চিকিৎসকের। অবশেষে তিনি সবুজের চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। নিজের আইফোন কেনার জমানো টাকা তিনি সবুজের চিকিৎসার জন্য দিয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, পিরোজপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত ডা. সাকিল সরোয়ার। তিনি থাকেন পৌর শহরের শিকারপুর এলাকায়। শখের আইফোন কেনার জন্য তিনি টাকা জমাচ্ছিলেন। সেই লক্ষাধিক টাকা তিনি সবুজকে দেন তার কিডনির চিকিৎসার জন্য।
সাকিলের ভাই জামিল সরোয়ার আমেরিকায় থাকেন। সেখানে তিনি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এনওয়াইপিডির শহর গোয়েন্দা ব্যুরোতে কর্মরত। তাদের বাবা সরোয়ার হোসেন ছিলেন সফল আইনজীবী। এ ছাড়া তিনি (সরোয়ার হোসেন) বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সাকিল সরোয়ারের বাবা ছোট ভাই জামিল সরোয়ারের নিউইয়র্কের বাসায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সাকিল সরোয়ারের মা রেণু সরোয়ার পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।
অসুস্থ সবুজ সাভারের আশুলিয়ায় চাচা নিজাম উদ্দিনের বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে ঢাকার শ্যামলীতে সিকেডি হাসপাতালে কিডনি অপারেশনের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন সবুজ। স্ত্রী সালমা ইয়াসমিন তিশা শারীরিক প্রতিবন্ধী। সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা করাতে না পারলেও সবুজের পাশে দাঁড়ায়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
অসুস্থ সবুজ মিয়া বলেন, আমার কিডনি নষ্ট হওয়ার পর মাকে ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি। এখন মা আমাকে একটি কিডনি দিচ্ছেন। আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা না পেলে আমি চিকিৎসা করাতে পারতাম না। আমি যখন জানতে পেরেছি যে আমার দু’টো কিডনিতেই সমস্যা তখন থেকে ধরে নিয়েছিলাম আমার জীবনের সময় শেষ। তারা (যারা তাকে সহায়তা দিয়েছে) আমার দিকে ফিরে না তাকালে আমার কী যে হত তা আল্লাহই জানেন। যারা আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের কাছে ঋণী। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুক।
ডা. সাকিল সরোয়ার বলেন, ডু সামথিং এক্সেপশনাল নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সবুজ মিয়ার নাম ও কিডনি সমস্যার কথা জানতে পারি। আমার পরিচিত জেবিন ইসলাম ওই গ্রুপের মাধ্যমে অনেক গরিব রোগীকে সহযোগিতা করে থাকেন। সবুজ মিয়ার স্ত্রীর কিডনি দেওয়ার কথা থাকলেও শ্বশুর-শাশুড়ি বাধা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর এগিয়ে আসেন সবুজের মা। তখন সমস্যা দেখা দেয় টাকার। নিউইয়র্কের এক প্রকৌশলী ভাই ২ হাজার ২০০ ডলার জোগাড় করে দিলে তারপরও আরও ১ লাখ ২২ হাজার টাকা লাগবে বলে জানা যায়। একটি আইফোন কেনার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে টাকা জমাচ্ছিলাম। যখন দেখলাম টাকার অভাবে সবুজের চিকিৎসা আটকে যাচ্ছে তখন চিন্তা করলাম ফোন তো পরেও কেনা যাবে। ফোন না কিনলে কিছু হবে না, কিন্তু টাকাটা পেলে সবুজ তো বাঁচবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন গ্রুপের একজন অ্যাডমিন। গ্রুপে প্রায় ৭০ হাজার ডাক্তার আছেন। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আসলেই সবুজের টাকা দরকার। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন সবুজ মিয়াকে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই ঢাকার সিকেডি হাসপাতালে সবুজ মিয়ার কিডনির অপারেশন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২১
আরএ