রাজশাহী: স্বামীর নামে পর্নোগ্রাফির মামলা ঠুকে দিয়েছেন এক স্ত্রী। তালাক না নিয়ে আরেক ছেলেকে বিয়ের পর এমন অভিযোগ এনেছেন ওই স্ত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর পুঠিয়া এলাকায়। ভুক্তভোগী স্বামীর দাবি, বিয়ের পর তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি নিজেই ধারণ করেন তার স্ত্রী। এরপর তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। কিন্তু সেই টাকা না দেওয়ায় তার নামে থানায় গিয়ে এই পর্নোগ্রাফি মামলা করেছেন স্ত্রী।
শনিবার (২ অক্টোবর) রাতে রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় গিয়ে স্বামী আব্দুল বারিকের (৩০) নামে এই মামলা করেন তার স্ত্রী (২২)। এরপর পুঠিয়া সদর থেকে বারিককে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
গ্রেফতারের পর রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের পানানগর গ্রামের আব্দুল বারিক জানান, তার স্ত্রীর বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার সমেসপাড়া গ্রামে। মুঠোফোনে তাদের প্রেম হয়। এরপর গত ২৬ আগস্ট তারা রাজধানী ঢাকার একটি কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রী নিজেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন। এরপর বিয়ের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই তার রূপ পাল্টাতে থাকে।
এক পর্যায়ে বারিকের ফোন ব্যবহার করে তার ক'জন বন্ধুর মোবাইলে ওই ভিডিও পাঠিয়ে দেন। এরপর এর জন্য উল্টো স্বামীকেই দায়ী করেন এবং এ জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। আর টাকা না দিলে পর্নোগ্রাফির মামলা করার ভয় দেখান। বারিক তার স্ত্রীর দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে স্ত্রী বাদী হয়ে স্বামীর নামে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর বারিককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অভিযুক্ত স্বামী বারিকের দাবি, এই কাজে তার স্ত্রীর সঙ্গে আরও সহযোগী রয়েছেন। আর এটি যে একটি প্রতারক চক্র তা তিনি আগে টের পাননি। তিনি না বুঝেই এই ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে সব বুঝতে পারেন। তার জানামতে এর আগেও প্রবাসীসহ ৩/৪টি বিয়ে করেছেন ওই নারী। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কৌশলে সেই ভিডিও ধারণ করে টাকা চাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই প্রতারণা। সবাইকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই এই চক্রের উদ্দেশ্য। না হলে তার সঙ্গে তালাক না হওয়ার আগেই এই অল্প সময়ের মধ্যে আরেকজনকে বিয়ে করলেন কিভাবে, প্রশ্ন রাখেন বারিক।
বিয়ের সপ্তাহ না যেতেই ওই নারী তার কাছে তালাক চান। সঙ্গে দেনমোহর ও দুই বছরের খোরপোষ বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করেন বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন বারিক।
এদিকে, মামলার বাদী ওই নারী বলেন, দুই মাস আগে মোবাইলে বারিকের সঙ্গে তার প্রেম হয়। গত ২৬ আগস্ট ঢাকার একটি কাজী অফিসে গিয়ে তারা বিয়ে করেন। এরপর আবারও রাজশাহীর পুঠিয়ায় চলে যান। তবে বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না তার। এজন্য তিনি আবারও ঢাকায় চলে যান। সেখানে একজনের সঙ্গে তার বিয়ের কথা হচ্ছিল। এরই মধ্যে বারিক ওই ছেলের মোবাইলে তাদের আপত্তিকর ভিডিও পাঠান। এজন্যই তার নামে মামলা করেছেন।
তবে বারিকের সঙ্গে তালাক হওয়ার আগেই আরেকজনের সঙ্গে বিয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন- 'এটি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার'। এ সময় তার বিরুদ্ধে স্বামী বারিকের আনা সব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে- কোনো উত্তর দিতে চাননি এই নারী।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ওই নারী বাদী হয়ে স্বামীর নামে এই পর্নোগ্রাফি মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ওই নারীর অভিযুক্ত স্বামী বারিককে গ্রেফতার করেন। তবে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। বর্তমানে উভয়ের ব্যাপারেই খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তাই তদন্ত ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছুই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২১
এসএস/এজে