মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার নদী ধামাই। সম্প্রতি এই নদীর খনন কাজে উঠেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৪টি জেলার ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় ধামাই নদীর মোট ছয় কিলোমিটার অংশের কাজ তিন কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৯২ টাকা ব্যয়ে শুরু হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া এই কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকার মতিঝিলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শহিদ ব্রাদার্স। ২০২০ সালের মে মাসে কাজটি সম্পন্ন হয়।
তবে গত ৭ অক্টোবর খনন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নছিব আলী।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, নদী থেকে মাটি খনন করে নদী তীরে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নদীর মাটি তীরের রাস্তায় না দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তার পাশ খাড়াভাবে খনন করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি তিন কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রকল্পে ঠিকাদার সর্বোচ্চ ৫০-৬০ লাখ টাকার কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
নছিব আলী বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা মানেনি। অনিয়ম রেখেই কাজ শেষ করে চলে যায়। তারা নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের বসতবাড়ির সামনে খনন করা মাটি না রেখে উঁচু টিলার মতো করে রাখেন। চলাচলের স্বার্থে স্থানীয়দের নিজস্ব অর্থায়নে তা ড্রেসিং করতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুজানগর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের পাটনা ও ২নং ওয়ার্ডের বাগেরকোনা গ্রামের মইজ উদ্দিনের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে দুই গ্রামের জনসাধারণ চলাচল করেন। এই দুই এলাকায় প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। ধামাই নদীর উত্তর পাড় দিয়ে পাটনা ও বাগেরকোনা গ্রামের জনসাধারণ ইউনিয়ন পরিষদ, আজিমগঞ্জ বাজার ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। এটি ওইসব এলাকার মানুষের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা। বর্তমানে ওই রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী, এলাকার জনসাধারণ, এমনকি রিকশা, অটোরিকশা বা ঠেলাগাড়িও চলাচল করতে পারছে না। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা বাবুল মিয়া ধামাই নদী খননের পর সুবিধার চেয়ে জনদুর্ভোগই বেশি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শহিদ ব্রাদার্সের পরিচালক আব্দুস সহিদ বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে অনেক আগেই পাউবোর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। দু’টি প্যাকেজে নদীর খনন কাজ পৃথক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করেছে। যেসব স্থানে ভাঙন সমস্যা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, সেখানকার খনন কাজ কারা করেছেন নিশ্চিত হতে হবে।
পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. খোরশেদ আলম বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কিছু স্থানে ভাঙন ও খনন কাজে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। খনন করা মাটি নদী তীরবর্তী স্থানে বা রাস্তায় ঠিকাদারের ড্রেসিং করে দেওয়ার কথা সিডিউলে উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের টাকায় মাটি ড্রেসিং করার কথা নয়। কাজে অনিয়ম হয়ে থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এর দায় নিতে হবে।
বড়লেখা ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
বিবিবি/এনএসআর