কুমিল্লা: এক নারীর সঙ্গে দেড় বছরের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল কানু মিয়ার (৫০)। ১৭ অক্টোবর রোববার কানু মিয়ার সঙ্গে টাকা-পয়সা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় ওই নারীর।
এ ঘটনায় কানু মিয়াকে আটক করে র্যাব। তিনি সদর উপজেলার ধনপুর গ্রামের সেকান্দার আলীর ছেলে।
জানা যায়, ১৭ অক্টোবর সকাল ৭টায় দাউদকান্দির মালিখিল গ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের পুকুরে বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন দাউদকান্দি থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ বিষয়ে ওই নারীর ছেলে বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নজরে এলে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা তদন্ত শুরু করে।
ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভিকটিম ১৬ অক্টোবর দুপুর ১টার সময় কাজে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান। দুপুর ২টা থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। পরবর্তীতে দাউদকান্দি থানার মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি জেনে কাজ শুরু করে র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা। মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে র্যাব জানতে পারে ওই নারীর সঙ্গে কানু মিয়া নামে এক ব্যক্তির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। র্যাব কানু মিয়ার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১৮ অক্টোবর র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়।
বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে কানু মিয়া জানায়, ওই নারীর সঙ্গে তার দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এবং সে তাকে আর্থিক সহায়তা ও ভরণ-পোষণ করে আসছিল। একপর্যায়ে কানু মিয়া জানতে পারে, তিনি ছাড়াও ওই নারীর আরও একাধিক লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কিছুদিন ধরে ভিকটিম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবুর্চিদের সঙ্গে রান্না-বান্নার সহযোগী হিসেবে কাজ করত, যা কানু মিয়ার পছন্দ ছিল না। সে কারণে তিনি কাজ না করার জন্য তাকে নিষেধ করেন। নিষেধ করা সত্ত্বেও গত ১৫ অক্টোবর শুক্রবার কানু মিয়া তাকে ওই কাজে দেখতে পান এবং মোবাইল ফোনে কল করে তার অবস্থান জানতে চাইলে সে তার ভাইয়ের বউকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছে বলে জানায়। যার কারণে তার প্রতি কানু মিয়ার ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়।
১৬ অক্টোবর দুপুরে ওই নারী কানু মিয়ার মঠপুস্কুরিনী গ্রামের ‘মাহি ফার্নিচার মার্ট’ দোকানে গিয়ে তার বিভিন্ন আর্থিক চাহিদার কথা বললে কানু মিয়া তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার কারণে তাদের মধ্যে ব্যাপক কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কানু মিয়া তার দোকানে ফার্নিচার তৈরির কাজে ব্যবহৃত বাটাল দিয়ে প্রথমে তার পেটে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং পরবর্তীতে গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কানু মিয়া তার মরদেহ দোকানে ফার্নিচারের আড়ালে লুকিয়ে রেখে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যায়। রাতে পুনরায় তার ফার্নিচার দোকানে যায় এবং মরদেহটিকে দুইটি বস্তায় ভরে রশি দিয়ে বেঁধে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে গুম করার জন্য প্রস্তুত করে। মরদেহটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য তার একটি গাড়ির প্রয়োজন হয়। কানু মিয়ার একমাত্র ছেলে গাড়িচালক, তবে ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ ছিল। তাই কৌশলে সে তার ছেলের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য জানায় যে, তার কিছু ফার্নিচার আছে যা দ্রুত দাউদকান্দি গিয়ে ডেলিভারি দিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ফার্নিচারের ক্রয়কারী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে হুমকি দিয়েছে। তখন তার ছেলে জানায়, সে গাড়ি নিয়ে ওয়ার্কশপে আছে এবং রাতের খাবার খায়নি। তখন কানু মিয়া বলে, তুই তোর গাড়িটি আমার দোকানের সামনে রেখে বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে আয়। ততক্ষণে আমি মালামাল লোড করে নিই। কানু মিয়ার ছেলে বাবার কথামতো দোকানের সামনে গাড়ি রেখে বাসায় খাবার খেতে গেলে তার অগোচরে কানু মিয়া মরদেহটি গাড়িতে রেখে দেয়। কানু মিয়ার ছেলে খাবার খেয়ে আসলে তারা দাউদকান্দির উদ্দেশে রওনা করে। পরবর্তীতে রাত ২টার সময় দাউদকান্দির মালিখিল গ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছলে কানু মিয়া রাস্তার ডান পাশে একটি বড় পুকুর দেখতে পেয়ে তার ছেলেকে ফার্নিচারের মালিক এখানেই মাল নিতে আসবে বলে জানায়। তখন কানু মিয়া কৌশলে তার ছেলেকে পান আনার কথা বলে রাস্তার ওপর দিকে টং দোকানে পাঠায় এবং এর মধ্যেই সে মরদেহটি মহাসড়কের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। তখন তার ছেলে পান নিয়ে আসলে সে মাল ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে বলে জানায় এবং বাসায় চলে আসে।
মঙ্গলবার বিকেলে র্যাব-১১ কুমিল্লার উপপরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, আটক আসামিকে দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অজ্ঞাত হত্যা প্রতিরোধ ও হত্যাকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
আরএ