ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হঠাৎ বন্যায় ভেসে গেছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি

এখন খাবো কী?

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
এখন খাবো কী?

লালমনিরহাট: অসময়ে হঠাৎ বন্যায় লালমনিরহাটের সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ায় খাদ্য সংকটের শঙ্কায় কৃষক পরিবার। দুই দিনে বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

 

বুধবার (২০ অক্টোবর) দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপে ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশকিছু স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছিড়ে গেছে। কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানির চাপে কালীগঞ্জের কাকিনা রংপুর সড়ক ধসে গিয়ে গংগাচওড়া শেখ হাসিনা সেতু পার হয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মহিষখোচা অংশে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে বেশকিছু বাড়ি ঘর, হাজার হাজার পুকুরের মাছ।  
বুধবার বন্যা সৃষ্টি হলেও পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পরে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক নিচে নেমে আসে। কম সময় স্থায়ী হলেও অসময়ে হঠাৎ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। হাজার হাজার হেক্টর জমির উঠতি ফসল বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে বন্যার ক্ষত ভেসে ওঠে বন্যা কবলিত এলাকায়।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৮৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বাম্পার হয়েছিল। দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে আমন ধান ঘরে তোলা শুরু হতো। এরই মধ্যে বন্যায় ডুবে গেছে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত। এছাড়াও ভুট্টা ১৯২ হেক্টর, চিনা বাদাম ৫২ হেক্টর, সদ্য রোপণ করা আলু ৬৪ হেক্টর, মাশকালাই ৫ হেক্টর, মরিচ ৫ হেক্টর, পিঁয়াজ ১৬ হেক্টর ও ৯১ হেক্টর বিভিন্ন জাতের সবজি ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। সবমিলে গত বন্যায় ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।

গোবর্ধ্বন চরের চাষি শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় লাখ টাকা খরচ করে ৭ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপণ করেছিলাম। চারাগুলো বেশ ভালোই হয়েছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ বন্যা এসে সব ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে। বালুতে চাপা পড়েছে তার স্বপ্ন।

মহিষখোচা রজবপাড়া গ্রামের চাষি আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র ৫-৭ দিন পরে ২ বিঘা জমির আমন ধান ঘরে তোলা যেত। বন্যা এসে নষ্ট হলো কষ্টে চাষ করা আমন ধান। খরচ তোলা তো দূরের কথা ঋণের টাকা পরিশোধ আর পরিবারের খাদ্য যোগান নিয়ে পড়েছি চরম  দুশচিন্তায়।

একই গ্রামের আজিজ মিয়া বলেন, ৪ বিঘা জমির আমন ধান কেটে রোদে শুকাতে দিয়েছি। দুই দিন পরে বেঁধে বাড়িতে নেওয়ার কথা। এমন সময় বন্যায় সব ভেসে গেছে। স্বপ্নেও ভাবিনি এমন সময় এতো বড় বন্যা হবে। এখন খাবো কি? সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, গত বন্যায় ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ডুবে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ১২ শতাংশে আংশিক ফসল আসতে পারে। সেক্ষেত্রে চাষিদের জমি থেকে কচুরী পানা ও আবর্জনা সড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।