ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সড়ক দুর্ঘটনায় বসুন্ধরার কর্মকর্তা নিহত

কথা রাখছে না অ্যাংকর সিমেন্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
কথা রাখছে না অ্যাংকর সিমেন্ট নিহত হাবিব খান অনিক

ঢাকা: অ্যাংকর সিমেন্টের ট্রাকের ধাক্কায় গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) নিহত হন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের বরিশাল অঞ্চলের বিভাগীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক (ডিএসএম) হাবিব খান অনিক।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা পূরণে গড়িমসি করছে অ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে পেশাগত কাজে বসুন্ধরা মাল্টি ফুডের একটি প্রাইভেটকারে করে বরিশাল থেকে ঝালকাঠি যাচ্ছিলেন হাবিব খান অনিক। পথে রাজাপুর থানার নলবুনিয়া বাজার এলাকায় অ্যাংকর সিমেন্টের একটি ট্রাক (বরিশাল মেট্রো-ট-১১-০০৪৭) ধাক্কায় গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় প্রাইভেটকারে থাকা অনিক মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় প্রাইভেটকার চালক হানিফ হাওলাদার ও শাহিনূর রহমান নামে আরও দুইজন আহত হন। পরে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুটি গাড়িই থানায় নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর থেকেই ঘাতক ট্রাকের চালক সুজন হাওলাদার পলাতক রয়েছেন।

অ্যাংকর সিমেন্টের ঘাতক ট্রাক

এদিকে ঘটনার পর অ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিয়ে অনিকের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে এমন আশ্বাসে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু দাফনের পর পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও শনিবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত অ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। নিহত হাবিব খান অনিক ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দ.শিবপুর গ্রামের মুদি দোকানি ফারুক খানের ছেলে। ১১ মাস আগে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী বর্তমানে তিন মাসের অন্তঃসত্বা।

এ বিষয়ে অ্যাংকর সিমেন্টের পরিবহন খাতের প্রধান আলী আহসান বলেন, দুর্ঘটনার পর নিহতের পরিবার ও বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রস্তাবনা গ্রহণ করে ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা এ বিষয়টি বলতে পারবেন। এ সময় কী প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি কী আশ্বাস দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সুদূত্তর দিতে পারেননি। সব কিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে বলে দায় চাপিয়ে দেন।

এ বিষয়ে অ্যাংকর সিমেন্টের সিইও মেজর (অব.) শাহেদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। এ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হবে।  এ জন্য আমরা একটু অপেক্ষা করছি থানা থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে। আমাদের ট্রাকটি আনতে পারলে এবং কোনো মামলা না হলে আমরা ক্ষতিপূরণের কথা চিন্তা করতে পারতাম। ’

আপনারা ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছেন বলেই মামলা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। ’

তবে রাজাপুর থানা পুলিশ জানায়, সেদিন কোনো মামলা হয়নি, মামলা হয়েছে তিনদিন পর।

দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকার

বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এজিএম শাহীন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিহত কর্মকর্তার পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে। যেহেতু পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী নিহত হয়েছেন; তাই অ্যাংকর গ্রুপ প্রথমে সহায়তা করে মীমাংসার কথা বললেও এখন তারা মিথ্যাচার করছে। এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। ’

এদিকে নিহতের চাচা সামাদ খান জানান, অ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করায় ঘটনার তিনদিন পর গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ঝালকাঠির রাজাপুর থানায় তিনি একটি মামলা করেছেন।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই অ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে মীমাংসা করার কথা বললে কোনো আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই আমরা মরদেহ দাফন করি। কিন্তু ঘটনার তিনদিন পর তারা বলছে ক্ষতিপূরণ দেবে না। আমাদের পক্ষ থেকে যা করার করতে বলেছে। তাই শুক্রবার একটি মামলা দায়ের করেছি। ’

অ্যাংকর সিমেন্টের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজাপুর থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর অ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। তবে নিহতের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মাফিক ক্ষতিপূরণ (১৫ লাখ) দিতে না চাওয়ায় বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। তাই ঘটনার তিনদিন পর অ্যাংকর সিমেন্টের ট্রাক চালককে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যহত আছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।