যশোর: চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পানিবন্দি অবস্থাতেই চলছে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের বাঁচা-মরার সংগ্রাম।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ভোররাতে বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান হাটগাছা গ্রামের কালীপদ মণ্ডল (৯২)। বসতঘরসহ চারপাশে পানি থাকায় তার মরদেহ রাখতে হয়েছে নৌকায়। আর সেই নৌকাতেই সারতে হয়েছে সৎকার।
মৃত কালীপদ মণ্ডল হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মনোজ কান্তি মণ্ডলের পিতা।
মৃত কালীপদ মণ্ডলের ছেলে মনোজ কান্তি জানান, বাড়ির চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। বাবা মারা যাওয়ায় একটি নৌকায় মরদেহটি রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা ও গ্রামবাসী মরদেহে পুষ্পঅর্পণ করেছি। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে সৎকারের সিংহভাগ কাজ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু ভালো। এ জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ হবে কবে? আমার বাবার মরদেহ সৎকার করতে হচ্ছে নৌকায়!
প্রসঙ্গত, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নামছে না। বৃষ্টি হলেই এলাকার বিলগুলো উপচে ভবদহ অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ তলিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতার।
বর্তমানে গ্রামগুলোর হাজার হাজার বাড়ি পানিমগ্ন হয়ে আছে। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পানীয় জলের সংকট প্রকট। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। কয়েক হাজার মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে মাচা করে থাকছে লোকজন। শতাধিক পরিবার উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
ইউজি/এনএসআর