ঢাকা: রংপুরে আটকের পর মৃত্যু হওয়া সেই ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আবেদনকারী আইনজীবী আদালতে একটি ছবি দেখিয়ে বলেছেন- ওই ব্যক্তির মাথা থেতলানো।
এরপর আদালত ১১ নভেম্বর মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ওই ঘটনায় পুলিশের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে সুরতহাল প্রতিবেদনসহ পুলিশের এক প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর বুধবার (০৩ নভেম্বর)বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করে অমিত দাশ গুপ্ত আদালতে বলেন, ২০১৯ সালের এক মামলায় ওই আসামির কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছিলো। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। মাদক বিক্রয় ও সেবন করে থাকে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত করার নিমিত্তে অনুসন্ধান তদন্ত করে ২ অক্টোবর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে আহবায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সুরাতহাল প্রতিবেদন থেকে অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, তার শারীরিকভাবে কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
এ সময় জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ওনাদের সুরতহাল বলছে চিহ্ন নেই। কিন্তু এই যে ছবি, যেটা রংপুর থেকে তাজুলের প্রতিবেশী এক আইনজীবী পাঠিয়েছিলো সেখানে দেখা যাচ্ছে মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। মাথা থেঁতলানো।
এ সময় জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ঘটনা তদন্তে একজন জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করেন।
তখন আদালত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছিল।
বুধবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত জানান, ই-মেইলে রংপুর থেকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (০১ নভেম্বর) এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী হারাগাছ থানা ঘেরাও করেন। মৃত্যুবরণ করা তাজুল ইসলাম (৫০) কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের দালালহাট নয়াটারীর মৃত শওকত আলীর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় হারাগাছ থানার পুলিশ নতুনবাজার বছির বানিয়ার তেপতি নামক স্থানে অভিযান চালায়। এ সময় মাদকসেবী সন্দেহে তাজুলকে আটক করে। ‘নির্যাতনের’ এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
জানা গেছে, তাজুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে হারাগাছ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে হত্যার বিচারের দাবিতে থানা ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়। ভবনের সামনে রাখা একটি পুলিশ ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে থানা ভবনের ভেতরে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (অপরাধ) উজ্জ্বল কুমার রায় বলেন, আটক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়নি। তার বয়স বেশি ছিল। পা দিয়ে চাপ দিয়ে হাতকড়া ভাঙার চেষ্টা করায় হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি।
>>> পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩,২০২১
ইএস/এনএইচআর