ঢাকা: দেশে বেসরকারিখাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ছয় ক্যাটাগরিতে ১৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯।
উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ, আকৃষ্ট ও উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে বৃহৎ শিল্পে চারটি, মাঝারি শিল্পে চারটি, ক্ষুদ্র শিল্পে তিনটি, মাইক্রো শিল্পে তিনটি, কুটির শিল্পে দুটি এবং হাইটেক শিল্পে তিনটি।
বুধবার (০৩ নভেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এ সময় শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, আগামীকাল ৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নির্বাচিত শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯’ দেওয়া হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় পঞ্চমবারের মতো পুরস্কার দিচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত থাকার সম্মতি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা টেকসই শিল্পখাত বিকাশের মাধ্যমে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তার নির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রণালয় যুগপৎ সরকারি ও বেসরকারিখাতের দক্ষতা ও গতিশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন অভিযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বেসরকারিখাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির আয়োজন করছে।
তিনি বলেন, বেসরকারিখাতকে প্রণোদন এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। এর ভিত্তিতে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ ১২টি শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় আগামীকাল পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯ দেওয়া হবে।
পুরস্কারের বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পর্যায়ে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো, কুটির এবং হাইটেক ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। দেশীয় বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো, কুটির এবং হাইটেক শিল্পখাতের গুণগত মানোন্নয়ন। এসব ক্যাটগারির শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি। বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, যোগাযোগ এবং সেতুবন্ধন তৈরিতে সহায়তা। ভোক্তা সাধারণকে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া ও আস্থার পরিবেশ তৈরি। শিল্পখাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা সম্পর্কে ধারণা এবং শিল্পখাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ছয় ক্যাটাগরির শিল্পের জন্য তিনটি করে মোট ১৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান/উদ্যোক্তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর দুইটি ক্যাটাগরির দুটি পজিশনে যৌথভাবে দুটি করে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ায় এবং একটি ক্যাটাগরিতে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ায় এ বছর মোট ১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৯’ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে চারটি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে চারটি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে তিনটি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে তিনটি, কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে দুটি এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে তিনটি। পুরস্কার প্রাপ্ত প্রত্যেককে একটি করে ক্রেস্ট এবং সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।
বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম হয়েছে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পারি লিমিটেড, ২য় হয়েছে মীর সিরামিক লিমিটেড এবং ৩য় হয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস লিমিটেড, ২য় হয়েছে নোমান টেরি টাওয়েল মিলস লিমিটেড, ৩য় হয়েছে যৌথভাবে অকো-টেক্স লিমিটেড এবং ক্রীমসন রোসেলা সী ফুড লিমিটেড। ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেড, ২য় হয়েছে মাধবদী ডাইং ফিনিশিং মিলস লিমিটেড এবং ৩য় হয়েছে এপিএস হোল্ডিং লিমিটেড। মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে মাসকো ডেইরী এন্টারপ্রাইজ, ২য় হয়েছে খান বেকেলাইট প্রোডাক্টস এবং ৩য় হয়েছে র্যাভেন এগ্রো কেমিক্যালস লিমিটেড। কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে কোর-দি জুট ওয়ার্কস এবং ২য় হয়েছে সামসুন্নাহার টেক্সটাইল মিলস। হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ২য় হয়েছে ইনফরমেশন টেকনোলজি কনসালটেন্টস লিমিটেড এবং ৩য় হয়েছে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ক্ষুদ্র শিল্প এবং প্রায় সাড়ে ৮ লাখ কুটির শিল্প রয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পখাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পাশাপাশি দেশে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ এসএমই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। এসব এসএমই শিল্প প্রতিষ্ঠান/উদ্যোক্তা জিডিপিতে শতকরা ২৩ শতাংশ এবং মোট শিল্প কর্মসংস্থানে শতকরা ৮০ শতাংশ অবদান রাখছে। এছাড়া, দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং এ খাত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস