ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক

রমেল চাকমা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২১
চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক ...

ঢাকা: বাংলাদেশ বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠী ৪৫টি। আদিবাসী জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৮৭ হাজার।

প্রত্যেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। তাদের পড়নে ও বুননে এবং পোশাকের ধরনে রয়েছে বৈচিত্র্যতা।

বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করে থাকেন। তাদের প্রত্যেকের ঘরে রয়েছে নিজস্ব তাঁত। যা দিয়ে তারা চরকা ও তাঁতের সাহায্যে অত্যন্ত চমৎকার বস্ত্র তৈরি করে থাকেন। তাদের বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল সাধারণত জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলা ও প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে আসে কিন্তু বর্তমানে বাজারের সুতা ও রঙয়ের ব্যবহার বহুল প্রচলিত রয়েছে। পুরুষদের পোশাকে নকশার ধরণ কিছুটা কম লাগলেও নারীদের পোশাক পরিচ্ছদে থাকে বর্ণাঢ্য রং ও নকশার সমাবেশ। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠী হলো চাকমা। মূলত তারা নিজেদের চাংমা বলে সম্বোধন করে থাকেন। চাকমাদের মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থাৎ রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে প্রধান বসতি।

চাকমাদের নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি রয়েছে। চাকমা মেয়েদের পোশাক সাধারণত দু’টি অংশে বিভক্ত। চাকমা নারীরা বেইন নামক তাঁতে কাপড় তৈরি করে থাকেন। চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রের নাম পিনোন হাদি, যা বিভিন্ন নকশা ও সুতার মিশ্রণে বোনা হয়ে থাকে। পোশাকের নিচের অংশকে পিনোন, যা কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত এবং ওপরের অংশকে হাদি বলা হয়। পিনোনের সঙ্গে চিবুকি নামক সুন্দর নকশাযুক্ত আচল থাকে। হাদির সঙ্গে তারা ব্লাউজ পরিধান করে থাকেন। তারা মাথায় খবংও পড়ে থাকেন। আগেকার দিনে তারা তাদের জুম ক্ষেতের উৎপাদিত তুলা থেকে এসব পিনোন-হাদি তৈরি করতেন কিন্তু বর্তমানে তারা বাজার থেকে কেনা সুতা দিয়েও এই কাপড় বুনে থাকেন। চাকমা আদিবাসী পুরুষরা টন্নে হানি, জুন্নাছিলুম, ধুতি ইত্যাদি পরিধান করে থাকেন।

চাকমাদের বর্ষবরণ উৎসব বিজু। এই বিজু সাধারণত দু’দিন ধরে তারা পালন করে থাকেন। নতুন বর্ষের আগের দিনকে তাদের ভাষায় বলা হয় ফুল বিজু। এই দিনে চাকমা আদিবাসীরা সবাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেন সবার মঙ্গলের উদ্দেশে। বর্ষবরণ দিনকে তাদের ভাষায় বলা হয়ে থাকে মূল বিজু। এই দিনেও চাকমা আদিবাসীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে থাকেন এবং হিয়ংয়ে (প্রার্থনা ঘর) গিয়ে সবার জন্য প্রার্থনা করে থাকেন। এই বিজুর দিনে তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনোন-হাদি পড়ে থাকেন। বিজু ছাড়াও তারা তাদের কঠিন চীবর দান, মহাসংঘ দান এবং বুদ্ধ পূর্ণিমাসহ আরও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক অর্থাৎ পিনোন-হাদি পরিধান করে থাকেন। আলাম নামক কাপড়ে তারা তাদের নকশা সংরক্ষিত করে রাখেন। চাকমা আদিবাসী মেয়েরা বিভিন্ন রংয়ের পিনোন-হাদি পরেন। তবে তাদের প্রধান রঙ কালো ও লাল, যা চাকমা ভাষায় বলা হয় হালা ও রাঙা। জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলার আঁশ মোটা ও খসখসে হয়ে থাকে। এই তুলা দিয়ে তৈরি পোষাক তারা কঠিন চীবর দানে ধর্মীয় প্রধানকে উপহার দিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।