ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

গাইবান্ধার অচেনা জন্তুটি মূলত শিয়াল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২১
গাইবান্ধার অচেনা জন্তুটি মূলত শিয়াল

গাইবান্ধা: দেড় মাসের অধিক সময় ধরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ছয়টি গ্রাম ও পাশের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের ‘অচেনা জন্তুটি’ মূলত শিয়াল বলে শনাক্ত করেছে ঢাকা থেকে আসা বনবিভাগের বিশেষজ্ঞ দল।

বুধবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুক কেওয়াবাড়ী গ্রামে তিন সদস্যের দলটির সদস্য বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মো. কামরুদ্দীন রাশেদ   বলেন, মঙ্গলবার ও বুধবার আমরা এসব এলাকায় সরেজমিন কাজ করেছি।

নিহতের পরিবার ও আহতের সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলেছি।

তাছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলাসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। পর্যবেক্ষণের সময় আমরা আক্রান্তদের ধরণ, সময়, প্রাণীর আকার-আকৃতি, আচঁড়ের দাগ ও কামড়ের দাগের বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। আমরা অনেকটা জায়গা জুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি। এসব এলাকায় ছোট ছোট শিয়াল ও খেঁকশিয়ালের অবাধ বিচরণ রয়েছে। রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা ছোট প্রকৃতির শিয়াল বা খেঁকশিয়াল।  

তিনি আরও বলেন, পর্যবেক্ষণকালে আমরা এই এলাকায় অধিক সংখ্যক শিয়াল জাতীয় প্রাণীর উপস্থিতি পেয়েছি। সেখানকার বেশিরভাগ শিয়ালকে আমরা স্বাভাবিক থাকতে দেখেছি। খুব স্বল্প সংখ্যক শিয়াল জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এ ঘটনা ঘটছে।

হরিনাথপুর গ্রামের উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার বাড়ির পাশে ঘাস কাটতে গিয়ে একটি প্রাণীর হামলার শিকার হয়ে দুই সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ইমাম সাহেবের বিভিন্ন চিকিৎসাপত্র ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তার সুচিকিৎসা হয়নি। তাছাড়া তার চিকিৎসায় অনেক বিলম্ব হয়েছে। অথবা চিকিৎসায় কিছু ভুলের কারণে তিনি মারা গেছেন।

ঢাকা থেকে আসা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ দলে আরও ছিলেন, মাহবুব-ই-খোদা জুয়েল ও গাজী সাইফুল তারিক। বিশেষজ্ঞ দলটির সদস্য মাহবুব-এ-খোদা বলেন, এটি শিয়ালের প্রজনন সময়। এই সময় অনেক পশু-পাখির গায়ের রঙ কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। যা এখানকার শিয়ালের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এজন্য লোকজন আগের দেখা শিয়াল আর এখনকার শিয়ালের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারছেন না।

রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আতঙ্কিত মানুষের মধ্যে আমরা কাউন্সিলিং করবো যাতে তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়। এলাকার লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে তারা আতঙ্কিত হয়ে সব প্রাণীকে মেরে না ফেলেন।

হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অবাধে বন্যপ্রাণী হত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেটা এই এলাকাগুলোতে ঘটানো হচ্ছে। ডুমুরগাছা গ্রামে একটি মেছোবিড়ালকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এটা কখনোই কাম্য নয়।

দলটির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা, মো. রাহাত হোসেন ও বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরসহ শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ-তীর এর সভাপতি মো. রাকিবুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মো. রিফাত হাসান, তীর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখা সভাপতি মো. জিসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

গত দেড়মাস ধরে পলাশবাড়ী উপজেলার ছয়টি গ্রামে অচেনা জন্তুর আক্রমণ শুরু হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে তালুক কেঁওয়াবাড়ি, হরিণাথপুর, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া, দুলালেরভিটা ও তালুকজামিরা। এই সময়ে এই প্রাণীর আক্রমণে ফেরদৌস ইসলাম রুকু (৫৬) নামে একজনের মৃত্যু এবং ২০ জনের অধিক মানুষ আহত হন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়দের।

আক্রান্তদের দাবি, জন্তুটি দেখতে শিয়ালের মতো। এর মাথা ও লেজ আকারে বড়। ঝোপ-জঙ্গল, ধানের জমি থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ-গবাদিপশুকে আক্রমণ করছে। বর্তমানে জন্তুটির আক্রমণ পাশের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।

>>> 'অচেনা জন্তু'টি শিয়ালের কোনো উপপ্রজাতিও হতে পারে 

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।