ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

একান্ত সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার 

বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্পর্ক শক্তিশালী করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য 

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২১
বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্পর্ক শক্তিশালী করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য  হাজনাহ মো. হাশিম

ঢাকা:  ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেছেন, বাংলাদেশ - মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি- (এফটিএ) সম্পন্ন করাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটা করতে পারলে মালয়েশিয়া -বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য সম্পর্ক কোনো বাধা ছাড়াই আরও শক্তিশালী হবে।

 
বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলানিউজ: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। ৫০ বছরে দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

হাজনাহ মো. হাশিম: মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৫০ বছরে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এই সম্পর্ক শুধু সরকার-থেকে-সরকার পর্যায়ে নয়, জনগণের সঙ্গেও। আপনি সঠিকভাবে উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যেই ছিল মালয়েশিয়া। তারপর থেকে বিশেষ করে গত এক দশকে সম্পর্ক দ্রুততার সঙ্গে বেড়েছে। এটি আমাদের দু’দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী দাতোশ্রি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব উভয়ের নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা এই ইতিবাচক সম্পর্কের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।  

বাংলানিউজ: বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে কীভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি হতে পারে?
হাজনাহ মো. হাশিম:  মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বরাবরই ভালো। বাণিজ্য অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট আমরা, এটি একটি ইতিবাচক প্রবণতার দিকে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের আরও সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে মালয়েশিয়ার ৩০তম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মালয়েশিয়ার ২০তম বৃহত্তম রপ্তানির গন্তব্য বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে কোভিড মহামারির আগে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছিল, যা আগের বছরের রেকর্ড ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ আকর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এখানে আমাদের প্রধান বিনিয়োগকারীরা কিছু বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তবে আমি পুরোপুরিভাবে আত্মবিশ্বাসী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের টেকসই সহায়তা দিতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ান গভর্নমেন্ট-লিংক কোম্পানিগুলোর (জিএলসি) ক্ষেত্রে।

মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার বলেন, একইভাবে আমরা বড় বড় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে চাই। আসিয়ান অঞ্চলে যেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী, তারা মালয়েশিয়াকে পুরোপুরি গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণ মালয়েশিয়ার মাধ্যমে অন্যান্য আসিয়ান সদস্য দেশগুলোতে প্রবেশ সহজ হবে৷ আমি বিশেষভাবে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অপেক্ষায় আছি।

বাংলানিউজ:  বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার হিসেবে কোন কোন খাতে আপনি দুই দেশের সম্পর্কে জোর দেবেন?

হাজনাহ মো. হাশিম:  মালয়েশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন একটি দেশে হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আমি ভাগ্যবান। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নীত করার পাশাপাশি আমি অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে এবং এটি একটি বাণিজ্য চালিত দেশ যা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে আমি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি দেখতে চাই, অন্তত মহামারির আগের পরিসংখ্যানে পৌঁছানোর আশা করছি। আমি নিশ্চিত, ভালো নীতি ও উপকরণের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য -বিনিয়োগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পন্ন করা আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটা করতে পারলে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য সম্পর্ক কোনো বাঁধা ছাড়াই আরও শক্তিশালী হবে।
এই প্রেক্ষাপটে আমি বলতে চাই, মালয়েশিয়া ১৯৯৩ সাল থেকে ১৬ টি এফটিএ করেছে, যার মধ্যে সর্বশেষটি কোভিড -১৯ মহামারির মাঝে হয়েছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এখন অনেক বহুজাতিক কোম্পানির পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় এফটিএ-কে পুঁজি করে দেশটিকে রপ্তানির একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। যেহেতু মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করছে, আমি নিশ্চিত যে আমাদের দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি দুই মহান জাতির কূটনৈতিক সম্পর্কের মাইলফলক উদযাপনে উদগ্রীব।

বাংলানিউজ:  আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হাজনাহ মো. হাশিম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬,২০২১ 
টি আর/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।