প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে: বিশ্ব মানবতার কল্যাণে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্যারিসে সংস্থাটির সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
ইউনেস্কো মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুলের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে চলছে। বিশ্ব নেতাদের আমি অনুরোধ করবো আসুন এই মুহূর্তকে কাজে লাগাই, বিশ্ব মানবতার কল্যাণে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউনেস্কোর অর্জনগুলোকে উদযাপন করতে ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী একটি অন্যন্য মুহূর্ত। এছাড়াও শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পথে পরবর্তী ২৫ বছরে সংস্থার কার্যক্রমগুলোকে গভীরে থেকে দেখা এবং পুনর্বিবেচনা করার গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারির বিপদ আমাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং জীবনকে বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের উদ্ভাবনী কাজ এবং গতির মাধ্যমে টিকে থাকা শিখিয়েছে।
সংকট কাটিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে ৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। ডিজিটাল সরঞ্জাম ও সেবা, ইন্টারনেট সুবিধা, ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে শেখানোয় অগ্রাধিকার দিতে একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি সহায়ক অর্থবহ শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারদের অবশ্যই এক হতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে অবশ্যই ‘বৈশ্বিক পাবলিক পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের জন্য।
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।
বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ইউনেস্কো অব্যাহত ভূমিকা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই সংস্থাটিকে বিশ্ব শান্তি এবং সম্মিলিত সমৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণিত শান্তি কেন্দ্রীক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব সময় বিশ্ব শান্তি উদ্যোগের অগ্রভাগে থাকে।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমরা শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং যোগাযোগকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি। উপবৃত্তি, জেন্ডার-সংবেদনশীল পদ্ধতি, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, আইসিটি শিক্ষাসহ আমরা শিক্ষার সম্প্রসারণে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করছি।
অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্র্যোঁসহ আরও ২০টির মতো দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেন।
সভাপতিত্ব করেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে ( Audrey Azoulay )।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। রাতে অন্য সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণের সঙ্গে অফিসিয়াল ডিনারে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২১
এমইউএম/আরএ