মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে 'ভিআইপি'র ফাঁদে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটের টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হয় সাধারণ চালক ও যাত্রীদের।
নিয়ম অনুযায়ী ফেরি পার হওয়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ ছোট যানবাহনগুলো প্রথমে ঘাটের টার্মিনালে সিরিয়ালে থাকতে হয়।
তবে সিরিয়ালে আটকে থাকা গাড়ির চালকরা অভিযোগ করে জানান, 'ভিআইপি’দের কথা বলে পরে এসেও অনেক গাড়ি আগে পার হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে বসে থাকতে হচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৪টার পরে ফেরি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ দীর্ঘ সময় ঘাটে থাকার পরেও পদ্মা পার হতে পারেন না সিরিয়ালে আটকে থাকা সাধারণ চালকরা।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে অবস্থান করে দেখা গেছে এই চিত্র।
সরেজিমনে দেখা গেছে, শুক্রবার দুপুরে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ দেখা যায়নি। তবে টার্মিনালে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপসহ হালকা যানবাহনের এক সিরিয়াল ছিল। সিরিয়ালে কেউ ২ ঘণ্টা আবার কেউ ৪ ঘণ্টা ধরেও পদ্মা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল। ঘাটে আসা যেকোনো যানবাহনকে প্রথমে টার্মিনালে প্রবেশ করতে হচ্ছে। সেখান থেকে সিরিয়াল মেনে কিছু কিছু যানবাহন ফেরিঘাটে যাচ্ছে। মাত্র ৪টি ফেরি চলাচল করায় ঘাটে দুর্ভোগ যাচ্ছে না। যানবাহনের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ফেরি সার্ভিস বাড়ানো হোক। অথবা ভিআইপির নামে সিরিয়াল ব্রেক করে ফেরিতে গাড়ি ওঠানো বন্ধ হোক। তাহলেই সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ কমে আসবে। '
মো. জাহাঙ্গীর নামে এক চালক বলেন, 'আমি শুক্রবার সকালে ঘাটে আসছি। ঘাটে ঢুকতেই ট্রাফিক পুলিশ আমাকে টার্মিনালে গাড়ি পার্ক করতে বলেন। এরপর চার ঘণ্টা ধরে সিরিয়ালে আটকা। অথচ ভিআইপি গাড়ি একের পর এক চলে যাচ্ছে। মাত্র ৪টা ফেরি চলে। ভিআইপি গাড়িতেই ফেরি লোড হয়ে যায়। সিরিয়াল থেকে গাড়ি টানেই না। '
প্রাইভেটকারচালক মো. রোমান বলেন, 'একটি বাসা-বাড়ির মালপত্রবাহী পিকআপভ্যানও ভিআইপি নামে আগে ফেরিতে উঠে গেছে। পিকআপভ্যান কিভাবে ভিআইপি হয়? আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘাটে আটকে থাকি। সিস্টেম করে বেশিরভাগ গাড়ি ভিআইপি বলে পার করে দিচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই!'
চালকরা অভিযোগ করে বলেন, 'ঘাটের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ৫শ/এক হাজার টাকার বিনিময়ে কিছু কিছু গাড়ি সিরিয়ালে না দিয়ে সরাসরি ফেরিঘাটে পাঠিয়ে দেয়। আর বলে, এগুলো ভিআইপি! এই ভিআইপির ফাঁদেই আমরা সাধারণেরা আটকে আছি। '
নাম প্রকাশে ঘাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানান, 'প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্তা-ব্যক্তিদের ফোন-মেসেজ থাকে গাড়ি পার করে দেওয়ার জন্য। ঘাটে এসে অনেকেই ফোন ধরিয়ে দেন। আমাদের কিছুই করার থাকে না। '
বিআইডব্লিউটিসি'র বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দুই দফায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ নভেম্বর থেকে ফেরি চালু হয়। তবে শুধু দিনের বেলায় চারটি ফেরি দিয়ে হালকা যানবাহন পারাপারের নির্দেশনা রয়েছে। নৌরুটে এখন ফেরি কদম, বেগম রোকেয়া, কুঞ্জলতা ও সুফিয়া কামাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলাচল করছে।
বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. জামালউদ্দিন জানান, 'এখানে নির্ধারিত ফি'র বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ভিআইপি টোকেনও দেওয়া হয় না। মূলত ফেরির সংখ্যা এবং সময় সীমিত থাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কারণ যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। এরপরও অ্যাম্বুলেন্স, নারী ও শিশুদের নিয়ে আসা যানবাহন, অসুস্থ রোগী থাকলে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরিতে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়। যদি ফেরির সংখ্যা এবং সময় বাড়ানো হতো তবে এমন দুর্ভোগ থাকতো না। '
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের সহ ব্যবস্থাপক সামসুল আবেদীন বলেন, নৌরুটে ফেরির সংখ্যা ও সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। সময় এবং ফেরি স্বল্পতার কারণে ঘাটে চাপ একটু বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১
আরএ