ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যাল: ২০০৪-এর নিয়োগ অবৈধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১২
জাতীয় বিশ্ববিদ্যাল: ২০০৪-এর নিয়োগ অবৈধ

ঢাকা: ২০০৪ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহ শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ রায় দেন।



ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০০৪ সালে দৈনিক বাংলাবাজার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের চাকরি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সম্ভবত এতে ৮০৭ থেকে ৯৭৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তবে সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। ’

এদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জাফর আহমেদ বলেন, ‘২০০৪ সালে পাঁচটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের আলোকে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল করা হয়েছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা এগার শ হতে পারে। ’

নিয়োগ বাতিল করে আদালতের দেওয়া রায়ে বলা হয়, নতুনভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই নিয়োগ দিতে হবে। এর জন্য পাঁচটি দৈনিক পত্রিকায় নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এ নিয়োগে রিটে পক্ষভুক্তদের আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের বয়স শিথিল করতে হবে। তবে তাদের যোগ্যতা পরিমাপের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ’
 
‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে। এরপর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ’

রায়ে বলা হয়, নিয়োগ বাতিল হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ পর্যন্ত যে বেতন ভাতা পেয়েছেন সেটা ফেরত দিতে হবে না।
 
এ রায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।

প্রসঙ্গত, জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া একটি রিট আবেদন করেন। ২০০৬ সালে হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে ওই নিয়োগ বৈধ ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন গাজীপুর-১ আসনের সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ওই রায় কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন।

এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় গত বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া আট শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আপিল বিভাগের শুনানিতে বিব্রতবোধ করেছেন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞা ।

এরপর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি আপিল বিভাগের বিশেষ চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে পাঠান। তিনি বিষয়টি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আর নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয়েছে।

এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে করা লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের বেঞ্চ মূল রিট ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারির মধ্যে হাইকোর্টে নিস্পত্তির নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এক মাস সময় বৃদ্ধি করেন প্রধান বিচারপতি।

বিএনপির আমলে নিয়োগ পাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়ার করা রিট (মূল রিট) আবেদনের নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চটি নির্ধারণ করে দেন আপিল বিভাগ।

এ বেঞ্চে প্রায় চার সপ্তাহ শুনানি শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আব্দুল মতিন খসরু ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন ড. কামাল হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০,২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।