ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জ‌মি দখলের চেষ্টা, এম‌পি শাহে আলমের বিরু‌দ্ধে কৃষকের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
জ‌মি দখলের চেষ্টা, এম‌পি শাহে আলমের বিরু‌দ্ধে কৃষকের অভিযোগ রিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলমের বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন কৃষক রতন ঘরামি

বরিশাল: বরিশালের বানারীপাড়ায় ১২টি পরিবারের জমি দখলের চেষ্টায় হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল-২ আসনের এই সংসদ সদস্য দাবি করেন, কাগজপত্রে ঝামেলা থাকায় তিনি ওই জমি কিনতে গিয়েও কেনেননি।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের একজন বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠী ইউনিয়নের পশ্চিম তেতলা এলাকার বাসিন্দা কৃষক রতন ঘরামি এ অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে ওই কৃষক বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি রাত ১১টায় আমার বাড়িতে এমপি সাহেবের ম্যানেজার আলআমিন, স্থানীয় মেম্বার ইব্রাহিম, তুহিন গাজী, ইলিয়াস খান বাড়িতে এসে আমাকে আটকে রাখেন এবং পরের দিন ১৫ কাঠা জায়গা এমপি সাহেবের নামে লিখে দিতে হবে বলে হুমকি দেন। সেই সাথে সকালে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিলে স্বাক্ষর করতে বলেন।

ভুক্তভোগী আরও ১২টি পরিবার সঙ্গে রয়েছে জানিয়ে রতন ঘরামি বলেন, আমাকে পরিবারসহ আটকে রাখার খবর স্বজনরা জানতে পেরে ৯৯৯ এ যোগাযোগ করে এবং রাত ২টা ২০ মিনিটে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। এ সময় বাসা থেকে এমপি সাহেবের লোক তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খানকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আগেই তাদের পুলিশে ছেড়ে দিলে আমরা ভয়ে সকালে বানারীপাড়া থেকে পালিয়ে বরিশাল এসেছি। এখন আমার জীবন ও জমি দুটিই ঝুঁকিতে। আমার ছেলে কিছুদিন আগে মারা গেছে এবং আমি নিজেও অসুস্থ। আমাকে আপনারা বাঁচান, আমি আইনি সহায়তা চাই, পুলিশ আমাদের কোনো সহায়তা করেনি।

তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে এমপি সাহেব আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে আমার জায়গায় একটি প্রজেক্ট করার কথা বলেন। সে কারণে জায়গা লিখে দিতে বলেন। এরপর থেকে তার প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন এবং এমপি শাহে আলমকে জায়গাটা লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। আমি ছাড়াও ১২টি পরিবারের একই অবস্থা। তাদের জায়গাও এমপি সাহেব জবরদখল করে নিতে চান।

রতন ঘরামির ভাগিনা সুমন রায় বলেন, আমাদের ও মামার বাড়ি পাশাপাশি। রাতে যখন এমপি সাহেবের লোকজন মামার বাড়িতে যান তখন স্থানীয়দের সহায়তায় হামলার হাত থেকে মামাকে রক্ষা করি। কিন্তু এমপি সাহেবের ম্যানেজার তারপরও দুজন লোককে মামা রতন ঘরামির ঘরে রেখে যান। মামার জীবনের কথা চিন্তা করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়া হয়। তারপর তাদের পরামর্শে থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলি। পুলিশ এসে যখন মামার ঘর ঘেরাও করে তখন গভীর রাত। আর সেই সময়ে ওই ঘর থেকে গ্রামবাসীর সামনে তুহিন গাজী ও ইলিয়াসকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সেই লোকদের সকালে কোনো কিছু না বলেই পুলিশ ছেড়ে দিল!

তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘু, আর তার ওপর প্রভাবশালীদের নজর আমাদের ১২টি পরিবারের ওপর। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তার পাশাপাশি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি শাহে আলম বাংলানিউজকে বলেন, যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সবকিছুই মিথ্যা কথা। ওখানে আমার দাদাবাড়ি, যেখানে বেশ কিছু জায়গা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের রয়েছে। আর সেখানে একটি প্রজেক্ট করার কথা রয়েছে। তার পাশেই ওর (রতন ঘরামি) ৭৮ শতাংশ জায়গা রয়েছে। যেটি বিক্রির জন্য ওরাই আমার বাসায় এসেছিল। তখন জিজ্ঞাসা করলে ওরা জানায়, ৬ লাখ টাকায় ৭৮ শতাংশ জায়গা কিনছে এবং এখন ১২ লাখ টাকা চায়। আমি দুই লাখ টাকা বাড়িয়েও দিতে চেয়েছিলাম, ওরা এরপর ১০-১১ হাজার টাকা নিয়েছেও। এরপর আমি ঢাকাতে চলে এসেছি। এদিকে কাগজপত্র উঠিয়ে দেখি ওর নামে জায়গা আছে মাত্র ৩২ শতাংশ। তখন আমি স্বজনদের মানা করি ওই জায়গা না কিনতে, যেহেতু ঝামেলা রয়েছে।

তিনি বলেন, কিছু লোকজন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব কথা বলাচ্ছে। আমি এলাকায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করছি। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু মহল এটার (অভিযোগ) সাথে জড়িত হয়েছে। মূলত ও (রতন ঘরামি) জায়গা যাদের কাছ থেকে কিনেছে, তারাই ওর সাথে ঝামেলা করেছে। আর আমি কেন ওর জায়গা দখল করতে যাবো, সেটাই তো বুঝি না!

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জানুয়া‌রি ২৫, ২০২২
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।