ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শতবর্ষে সলঙ্গা বিদ্রোহ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
শতবর্ষে সলঙ্গা বিদ্রোহ

সিরাজগঞ্জ: হাজার বছর ধরে ভিন্ন ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী দ্বারা শাসিত-শোষিত বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে রক্ত ঝরানোর অনেক ঘটনা রয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যুগে যুগে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে হাজারও নিরীহ কৃষক-শ্রমিক-মজুর।

তেমনই ভারতীয় উপ-মহাদেশে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল বাঙালিরা। আর সেই স্বদেশি আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। ইতিহাসে সেই লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ ‘রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ’ দিবস আখ্যায়িত হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবসের শততমবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। স্বদেশি আন্দোলনের তরুণ নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে ‘সলঙ্গা বিদ্রোহ’ স্ফুলিংঙ্গের মতো জ্বলে ওঠা স্বাধীনচেতা মেহনতি বাঙালি রচিত এক মহাকাব্যের নাম। যে কাব্য সহস্রাধিক কৃষক-মজুরের রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার একটি হাটের নাম সলঙ্গা। চলনবিল অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল সলঙ্গা হাট। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সলঙ্গা হাটবার। এ হাটেই মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশের নেতৃত্বে স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীরা বিলেতি পণ্য বর্জনের আন্দোলনে নামে। ওইদিন স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষও বিলেতি পণ্য বর্জন শুরু করে। এ আন্দোলন দমন করতে হাটে উপস্থিত হয় পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস, জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক এসকে সিংহের নেতৃত্বে ৪০ জনের সশস্ত্র লাল পাগড়িওয়ালা পুলিশের দল। তারা সরাসরি স্বদেশি বিপ্লবী কর্মীদের কংগ্রেস অফিস ঘিরে ফেলে। গ্রেফতার করে আন্দোলনের মূল নেতা মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে।

মুহূর্তেই ফুসে ওঠে আন্দোলনের কর্মীরাসহ আপামর জনগণ। প্রিয় নেতাকে উদ্ধারের জন্য সহসা মিছিল বের করে তারা। স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠা জনতার দাবানল নেভাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রিটিশ প্রশাসন। জনতাকে ছত্রভঙ্গের জন্য পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। শুরু হয় বুলেট বৃষ্টি। ৪০ জন পাগড়িওয়ালা পুলিশের মধ্যে ৩৯টি রাইফেল থেকে গুলি চলতে থাকে। একটি রাইফেল থেকে কোনো গুলি বের হয়নি। কারণ সেটি ছিল একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ পুলিশের। বাকি ৩৯টি রাইফেলের গুলিতে রক্তে লাল হয়ে যায় সলঙ্গার প্রান্তর। সেদিনের সেই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার দেখানো হয়েছে। তবে বেসরকারি মতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে অনেকেই মনে করেন। মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে সলঙ্গা বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসকদের ভীত কাপিয়ে দিয়েছিল।
 
ঐতিহাসিক সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার তারুটিয়া গ্রামে ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার অসাধারণ নেতৃত্বে গণমানুষের রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত হয়েছে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি পালন করেছেন বিশেষ ভূমিকা।  

রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবসটি পালন উপলক্ষে তর্কবাগীশ পাঠাগার, সমাজ কল্যাণ সমিতি ও সলঙ্গা ফোরাম উদ্যোগে পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে সকালে পতাকা উত্তোলন, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

সমাজ কল্যাণ সমিতি ও তর্কবাগীশ পাঠাগারের সহ-সভাপতি গজেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবসের শততমবার্ষিকী বড় পরিসরে আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় তর্কবাগীশ পাঠাগারের আব্দুল ওয়াহিদ মিলনায়তনে চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান লাভু বাংলানিউজকে জানান, ঐতিহাসিক সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস প্রতিবছরই পালন করা হয়। তর্কবাগীশ পাঠাগারের উদ্যোগে এবারও দিবসটি পালন করা হবে। এ দিন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি। তবে তর্কবাগীশ পাঠাগারের অনুষ্ঠানে আমরা যোগ দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।