ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজবাড়ীতে টমেটোর বাম্পার ফলনেও মলিন চাষিদের মুখ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
রাজবাড়ীতে টমেটোর বাম্পার ফলনেও মলিন চাষিদের মুখ টমেটো সংগ্রহে ব্যস্ত চাষি পরিবারের সদস্যরা

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলার মাটি টমেটো চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ জেলার কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবার ফলনও হয়েছে ভালো।

তবে অসময়ের বৃষ্টিতে টমেটোতে কালচে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। ফলে পুনরায় ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন চাষিরা। এতে বেড়ে যাচ্ছে খরচ। কমছে লাভের পরিমান। যে কারণে কৃষকের মুখের হাসি অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।

রাজবাড়ীতে বিউটি ফুল, বিপুল প্লাস, বিগল ও মিন্টু সুপার ইত্যাদি উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর আবাদ হচ্ছে। জেলার সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় বেশি টমেটোর আবাদ হয়। বিঘা প্রতি ফলন হয় ১৫০ থেকে ২০০ মণ।

রাজবাড়ীর সদর উপ‌জেলার বরাট ইউ‌নিয়‌নের পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চল উড়াকান্দা, নয়নসুখ, অন্তরমোড়, গোপালবাড়ীতে ৩শ’ বিঘা জ‌মি‌তে চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের টমেটো। এই এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীর চরের জমিতে টমেটো আবাদ করছেন। টমেটো আবাদ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর আবাদ বাড়ছে। জেলায় উৎপাদিত টমেটো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাতে বিক্রি হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে রাজবাড়ীতে ৭২২ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায়। রাজবাড়ী সদরে ২৪৬, গোয়ালন্দে ৩৫৭, পাংশায় ৭৫, কালুখালীতে ৩৫ ও বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে।

চাষীদের কাছ থেকে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ, বীজ বপন, লাগানো ও শ্রমিকের মজুরিসহ কৃষকের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দিগুণের বেশি। ভাল ফলন হলে প্রতি বিঘা থেকে দেড় থেকে ২শ’ মন টমেটো বিক্রি করেন কৃষক। তবে এবার বৃষ্টিতে টমেটোর গায়ে ছোট ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যার কারণে এখন দামও কম পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাইকারী বাজারে টমেটো ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি ও ৫ থেকে ৭শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন সদর উপজেলার উড়াকান্দার গোপলবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে রয়েছে টমেটোর ক্ষেত। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে অনেক টমেটোতে পচন ও কালচে দাগ দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা থেকে পচা টমেটো ফেলে গাছ থেকে পাকা টমেটো ছিড়ে ঝুঁড়িতে রাখছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও টমোটো তোলার কাজ করছেন। এরপর সেই টমোটোর ঝুঁড়ি মাথায় নিয়ে মাঠ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বস্তায় ভরছেন। পরে সেখান থেকে ভ্যানে করে জেলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

চাষী হাবিবুর রহমান, কাশেম মন্ডল, করম আলী শেখ, হারেজ আলী শেখ ও রিয়াদ বাংলানিউজকে জানান, টমেটো লাভজনক ফসল। তারা প্রতিবছর টমেটোর আবাদ করেন। এবার ফলন ভাল হয়েছে। প্রথম অবস্থায় ভাল দামও পেয়েছেন। তবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে টমটোতে পচন ধরছে। আর বাজারেও এখন টমেটোর দাম কমে গেছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন শেখ বাংলানিউজকে জানান, এ বছর জেলায় টমেটো আবাদের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ঘূর্নিঝড় জাওয়াদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আমাদের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগে চাষিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর বাংলানিউজকে জানান, রাজবাড়ী জেলায় এ বছর ৭৯৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তার জন্য টমেটো ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগ থেকে টমেটো রক্ষার জন্য ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।