ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘এখন আমার রিকশায় সবাই উঠবে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
‘এখন আমার রিকশায় সবাই উঠবে’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: চোখে-মুখে বিষণ্নতার ছাপ। পায়ে জুতা নেই, পরনের শার্টটিও ছেঁড়াফাটা।

ভাঙাচোরা পুরনো একটি রিকশা নিয়ে ছুটে এলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবু কালাম। রিকশার হাল দেখে দ্বিধায় পড়েন যাত্রী মাহাবুর আলম সোহাগ। তবে বৃদ্ধের করুণ চাহুনিতে আবেগতাড়িত হয়ে সেই ভাঙাচোরা রিকশাতেই উঠে বসেন তিনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর যাত্রী পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পান আবু কালাম! এরপর গন্তব্যে গিয়ে ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি টাকা পেয়ে আনন্দে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ানোর মতো অবস্থা। ঘটনাটি গত ৯ জানুয়ারি দুপুরের।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর বাজার এলাকায় রিকশা চালান তিনি। তার বাড়ি এই ইউনিয়নে উত্তর সুহিলপুর গ্রামে। মূলত ভাঙাচোরা রিকশা আর বয়ষ্ক চালক হওয়ায় অনেক যাত্রী আবু কালামের রিকশায় উঠতে চান না। তবে এবার বিষণ্নতা কাটিয়ে হাসি ফুটেছে আবু কালামের মুখে। ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা উপহার পেয়েছেন তিনি।

ছেঁড়াফাটা শার্ট পরে খালি পায়ে প্যাডেল ঘুরাচ্ছেন আবু কালাম- এমন একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে গত ৯ জানুয়ারি পোস্ট করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্ট ডটকমের হেড অব কান্ট্রি মাহাবুর আলম সোহাগ।  

ভিডিওর বর্ণনায় বৃদ্ধ আবু কালামের করুণ দশা তুলে ধরে তাকে একটি নতুন রিকশা দেওয়ার জন্য হৃদয়বানদের সহযোগীতা চান তিনি। দেশ-বিদেশের অনেক হৃদয়বান মানুষ তাতে সাড়া দেন। আবু কালামকে নতুন রিকশা উপহার দেওয়ার জন্য সাংবাদিক সোহাগের কাছে অর্থ সহায়তা পাঠান তারা। এর মধ্যে আবু কালামের বাড়িতে গিয়ে তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন ঢাকা পোস্টের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয়।

বৃদ্ধ আবু কালামের বাড়িতে টিনের ঘর ছাড়া তার আর কোনো সম্পদ নেই। তার কোনো ছেলে সন্তানও নেই। দুই মেয়ের মধ্যে দুইজনকেই বিয়ে দিয়েছেন। এখন স্ত্রীকে নিয়েই তার অভাব-অনটনে জীবন কাটছে। রিকশা চালিয়ে দিনে এক-দেড়শ টাকা আয় করেন। এ অল্প আয়ে সংসার চলেনা বলে তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বৃদ্ধ আবু কালামের কাছে তার জন্য কেনা নতুন একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তুলে দেওয়া হয়। এ সময় সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভূইয়া, সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয়, জাগোনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত মো. রাফি ও বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি মেহেদী নূর পরশ সহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন রিকশা পেয়ে আপ্লুত আবু কালাম বলেন, আগে ভাঙাচোরা হওয়ায় আমার রিকশায় যাত্রীরা উঠতে চাইত না। এখন আমার রিকশায় সবাই উঠবে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি

সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগ জানান, রিকশার প্যাডেল ঘুরাতে বৃদ্ধ আবু কালামের অনেক কষ্ট হচ্ছিল। প্যাডেল পা চাপার সময় ওনার পায়ের রগগুলো টনটন করছিল। তাকে দেখেই অনুমান করা যায় তার দুঃখ-দুর্দশার কথা। ফেসবুকে আমি তার প্যাডেলে চাপ দেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করে তাকে নতুন একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা উপহার দেওয়ার জন্য সহযোগীতা চেয়েছিলাম। অনেক হৃদয়বান মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছেন। আজ রিকশাটি পেয়ে বৃদ্ধ আবু কালামের চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখেছি, সেটি অনেক বড় পাওয়া। যারা এই রিকশা উপহারের জন্য অর্থ দিয়ে সহযোগীতা করেছেন- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভূইয়া বলেন, সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগের মাধ্যমে বৃদ্ধ আবু কালাম নতুর একটি রিকশা পেয়েছেন। যারা রিকশার জন্য টাকা দিয়ে সহযোগীতা করেছেন- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এভাবে মানুষ একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে এলে অসহায়-গরীবদের দুর্দশা কমে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।