ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইকোপার্কের ভাঙা সেতু মেরামত করলেন পর্যটকরা

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
ইকোপার্কের ভাঙা সেতু মেরামত করলেন পর্যটকরা

বরগুনা: টেংরাগিরি ইকো পার্কের ভেতরে যাতায়াতের জন্য কাঠের সেতুগুলো ভেঙে গিয়েছিল। যে কারণে চলাচলে সমস্যা হত।

তাই পর্যটকরা নিজেরাই সেই সেতু মেরামত করে গন্তব্যে পৌঁছেন।

বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে এই বন। এখানে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ রয়েছে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির অসংখ্য সারি সারি গাছ ও ইকোপার্কের পাশেই সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের এক অংশ নিয়ে বিশাল বনভূমির ওপর টেংরাগিরি ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।

পর্যটকরা বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটকরা টেংরাগিরি বন ও সোনাকাটা সমুদ্র সৈকতে আসেন। সম্প্রতি রাস্তাঘাট ও বনের ভেতর ছোটখাটো ব্রিজ ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পর্যটকদের ঝুঁকি নিয়ে এসব ছোট ছোট খাল পারাপার হয়ে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল এই ট্যাংরাগিরি বনটি এখন অবহেলায়, অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে।

জানা জায়, ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয় বন বিভাগ। পরে ১৯৬৭ সালের এই বনাঞ্চলটিকে টেংরাগিরি বন নামকরণ করে ঘোষণা দেয়। এর আগে স্থানীয়দের কাছে হরিণঘাটার বন, পাথরঘাটার বন ও ফাতরার বনসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।

পর্যটক রাকিব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, টেংরাগিরি ইকোপার্কে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ ও সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত। মোটকথা অসাধারণ একটি পর্যটন স্পট। কিন্তু এই পর্যটন স্পটটিতে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ও রাস্তাঘাট নেই। পার্কের ভেতর পর্যটকদের জন্য বিশ্রাম ভবনগুলোও জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের এসব রাস্তাঘাট ও কালভার্টগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

তালতলী বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর তালতলী উপকূলীয় টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সকিনা বিটের আওতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ইকোট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। ওই সময় ইকোট্যুরিজমে ৫টি কুমির, ৯টি হরিণ, ২৮টি শূকর ও ১টি মেছোবাঘ ছিল। খাবার সরবরাহে সংকটের কারণে ২০১৮ সালে সংরক্ষিত এলাকা থেকে শূকর, কচ্ছপ ও মেছোবাঘ বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর হরিণের বেষ্টনী থেকে ৪টি হরিণও ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ইকোপার্কের সংরক্ষিত বেষ্টনীতে ২টি কুমির ও ৩টি হরিণ রয়েছে।

স্থানীয়রা বাংলানিউজকে বলেন, তালতলী টেংরাগিরি ফরেস্ট বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দিলে যেমন বনটি সংরক্ষিত থাকবে তেমনি নারী ধর্ষণ, পর্যটকদের নিরাপত্তাহীনতা, বন উজাড়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। ফরেস্ট বিভাগের পাশাপাশি পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের বিশেষ তদারকির জন্য বিশেষ টিম রাখার সুপারিশ করেন তিনি।

সোনাকাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী বাংলানিউজকে জানান, ইকোপার্কে নিরাপত্তা জোরদার করতে জনবল ও রাস্তাঘাট সংস্কারসহ টেংরাগিরি বন থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যেতে যে ছোট ছোট খালগুলো আছে তার উপরে কালভার্ট নির্মাণ করলে দর্শনার্থীদের সুবিধা হত ও পাশাপাশি সরকারের অনেক রাজস্ব আয় বাড়তো।

তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আপাতত কোনো বরাদ্দ নাই, আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব কাওছার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটকরা ভাঙা সেতু মেরামত করে চলাচল করছেন বিষয়টা আসলেই দুঃখজনক। টেংরাগিরি বনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই বনের ভেতরে ছোট ছোট ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ায় পর্যটকরা খুবই বিড়ম্বনায় পড়েন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রশাসনিকভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।