ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চুক্তিতে কারাভোগ, আসল আসামি গ্রেফতার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
চুক্তিতে কারাভোগ, আসল আসামি গ্রেফতার গ্রেফতার মো. সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকা: অন্যজনকে জেলে রেখে কৌশলে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা সফল হতে বাকি আর কয়েকদিন। কিছু সময় অতিবাহিত করতে পারলেই চিন্তাহীন এক জগত।

এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করেন। এরপর পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসার কাজও শেষ করে ফেলেছিলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি। কিন্তু দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি (শনিবার) করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল মিডফোর্ড হাসপাতাল এসে র‍্যাবের জালে আটকা পড়লো আসল আসামি মো. সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ। যার পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে সাজা ভোগ করছে নকল সোহাগ। আটক বড় সোহাগ কদমতলী থানার ৪৪০ বিড়ি ফ্যাক্টরি গলি, মুরাদপুর এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

উল্লেখ ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার কদমতলী থানার আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির টিটুকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। আর সে হত্যাকাণ্ডের প্রধান  আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ (৩৪)।

হত্যা পরবর্তীতে সেদিনই সোহাগসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে কদমতলী থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয় টিটুর পরিবার।

পুলিশের মাসব্যাপী চেষ্টায় ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার ১ নম্বর আসামি বড় সোহাগকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ চার বছর কারাভোগ করে ২০১৪ সালের ১৬ মে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায় সে।

২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর আসামি সোহাগের অনুপস্থিতিতে বিজ্ঞ আদালত রায় প্রকাশ করেন। বিজ্ঞ আদালত সোহাগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সোহাগকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

আদালতের রায় প্রকাশের পর আসল সোহাগ পরিকল্পনা মোতাবেক তার ফুফাতো ভাই নকল সোহাগকে (মো. হোসেন (৩৫), পিতা- মৃত হাসান উদ্দিন) ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকাসক্ত হোসেন ওরফে নকল সোহাগ মাসিক পাঁচ হাজার টাকার বিনিময় জেল হাজতে পাঠায়। এবং ২/৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবে মর্মে আশ্বস্ত করে।
 
গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে জনৈক সাংবাদিক উল্লিখিত টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসলে বিজ্ঞ আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। প্রতিবেদনে ২০১০ সালে ধৃত আসামি সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।

পরে বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র‍্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম কাজ করে আসছিল। এরই মধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪, প্রকৃত আসামির (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে অধিনায়ক র‍্যাব-১০, ধলপুর, ঢাকা বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করেন।

প্রকৃত সোহাগ উল্লিখিত ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সুকৌশলে দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতার প্রকৃত আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২টি হত্যা মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদক মামলাসহ সর্বমোট ১০টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার সোহাগকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন >>> মাসিক বেতনে নকল সোহাগ জেলে, বড় সোহাগ

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।