ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাঈদীর রায় ঘিরে সুন্দরগঞ্জে ৪ পুলিশ হত্যা-তাণ্ডবের ৯ বছর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
সাঈদীর রায় ঘিরে সুন্দরগঞ্জে ৪ পুলিশ হত্যা-তাণ্ডবের ৯ বছর

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৩ সালের এই দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে তার অনুসারীরা বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায়।

এক পর্যায়ে তারা হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে।

দেশব্যাপী আলোচিত চার পুলিশ হত্যার ঘটনার ৯ বছরেও শেষ হয়নি মামলার বিচার কাজ। ২০১৮ সালের ৪ মার্চ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। এরপর আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও তা এখনো শেষ হয়নি। আদালতের বিচারক না থাকায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকে প্রায় আড়াই বছর। বর্তমানে মামলার প্রধান আসামি সাবেক এমপি ও যুদ্ধাপরাধী আবদুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ তিনজন পলাতক এবং বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।

ফলে মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় একদিকে হতাশা বাড়ছে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারে অন্যদিকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এই মামলার বিচার কবে শেষ হবে এবং হত্যাকারীদের শাস্তিই কী হবে তা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

জানা যায়, ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর সুন্দরগঞ্জে তার অনুসারীরা তাণ্ডব চালায়। দফায়-দফায় হামলা, অগ্নিকাণ্ড আর লুটপাট চালানো হয় বামডাঙ্গা রেল স্টেশন, আ.লীগের দলীয় কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। এক পর্যায়ে দুস্কৃতিকারীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশ সদস্য তোজাম্মেল হক, নজিম উদ্দিন, বাবলু মিয়া ও হযরত আলীকে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ বাদী হয়ে ৮৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) জমা দেয় পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক প্রধান আসামি জামায়াত দলীয় সাবেক এমপি আবদুল আজিজসহ তিনজন। এছাড়া একজন মারা গেছেন আর বাকি সব আসামিই আছেন জামিনে।

তবে সাক্ষী গ্রহণে বিলম্ব এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক না থাকায় মামলার বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স। তিনি বলেন, এ মামলার মোট ৭৪ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে মাত্র ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এছাড়া বিচারকের বদলিজনিত কারণে মামলার কার্যক্রম দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল। তবে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং মামলার বিচার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, এ বছরেই মামলার বিচার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে এবং নারকীয় হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।

আদালতে বিচারাধীন এই মামলার বিষয়ে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত আদালতে তিন পুলিশ সদস্য সাক্ষী দিয়েছেন। এছাড়া মামলার স্থানীয় সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য তারিখে আদালতে তাদেরকে হাজির করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য আদালতের সরকারি কৌসুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করি, দ্রুতই মামলার বিচার কাজ শেষ হবে।

এদিকে, স্থানীয়রা এই দিনটিকে সুন্দরগঞ্জ ট্র্যাজেডির দিবস হিসেবে স্মরণ করে আসছে। এ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া অনুষ্ঠানে আয়োজন করেছে জেলা পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।