ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ৭ নদ-নদী!

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২২
ফরিদপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ৭ নদ-নদী!

ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলার চারপাশ জুড়ে রয়েছে প্রমত্তা পদ্মা নদী। প্রধানত আড়িয়াল খাঁ, আত্রাই, বিল বিলরুট, মধুমতি, চন্দনা, বারাশিয়া, ভুবনেশ্বর ও কুমার নদ-নদী।

জেলার নয়টি উপজেলাকে কম বেশি আঁকড়ে ধরেছে উল্লেখিত নদ-নদীগুলো।  

এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মায়ই এখন ধূ ধূ বালুচর। জেলার সদরপুর উপজেলার চরমানাইর, চর হরিরামপুর, মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম ও সদরপুরের ভাটি অঞ্চল, চরভদ্রাসনের পিঁয়াজখালী বাজার এবং হাজিগঞ্জের মোহনা শয়তানখালী থেকে ফরিদপুর সিঅ্যান্ডবি ঘাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পদ্মার বুকজুড়ে জেগে উঠছে প্রায় ২০০টি ডুবোচর।

এখনই ইমারত শিল্প নির্মাণের ভরা মৌসুম। এ সময় পদ্মায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে ডজন খানেক জাহাজ, বলগেট এবং কাঁচামালবাহী কার্গো। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য পরিবহনকৃত নৌযান মালিকরা এবং কাঁচামাল শিল্পের ব্যবসায়ীরা।  

চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সিমেন্ট বোঝাই দুই সারেং রহমান এবং করিম ফকির জানান, ব্যবসার সমস্ত লোকসানের প্রধান কারণই পদ্মায় পানি নেই। শুধু ডুবোচর। এর প্রভাব পড়ছে ফরিদপুরের সাতটি নদীতে। ফলে ফরিদপুর ছোট বড় সাতটি নদী এখন পানিশূন্য হয়ে গেছে।  

পদ্মার প্রধান শাখা নদী কুমার সেখানে এখন ধানক্ষেত। আড়িয়াল খাঁ নদীর বুক জুড়ে বালুর মাঠ। পাশা-পাশি কুমার নদী, বারাশিয়া, মধুমতি, চন্দনা, ভুবনেশ্বর দখল করছে প্রভাবশালী দখলদাররা। চলছে দোকান ঘর ও বাসাবাড়ি নির্মাণে কাজ। থামানোর কেউ নাই। ফলে আকারে ছোট হয়ে আসছে নদী। আবর্জনা ও বর্জ্যে নদী ভরাট হওয়ায় পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ফলে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায়।

অন্যদিকে, উল্লেখিত নদীর মধ্যে স্ব স্ব এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা অব্যাহতভাবে ময়লা-আবর্জনা এবং ভরাট মাটি ফেলে বাঁশ দিয়ে নদী দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ নির্মাণ করায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদী। দখল ও দূষণে নদীগুলো মৃত প্রায়।

ফরিদপুর সদরের হাজী শরীয়তুল্লা বাজার বেইলি ব্রিজের পূর্বপাড় মিষ্টি ব্যবসায়ীদের নদী দখল এবং সাপ্তাহে দু’দিন হাটের কাঁচা বাজারের ময়লা ফেলা হয় নদীতে।

পাশাপাশি শরীয়তুল্লা বাজারের প্রতিদিনের আবর্জনা ফেলায় পুরো নদীটি ভরাট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে ময়লা-আবর্জনায় ডুবে গেছে বিগত ৬০ বছর আগের বাজার ঘাটলাটিও। এ নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই!

এক সময় পদ্মার যৌবন ছিল। কুমার নদী ভরা ছিল পানিতে। সারা বছরই স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবন সংসার চালাতেন। এখন নদীতে পানি নেই। তাই পেশা পরিবর্তন করে জেলে কার্তিক এখন নাপিত। তার মতো এরকম অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে জীবন চালাচ্ছেন।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মার প্রধান শাখা নদীর মূল প্রবাহ মুখ হচ্ছে মদনখালী মোহনা। এই প্রধান পানি প্রবাহ অব্যাহত পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। পানি প্রবেশের উৎস মুখটিই বন্ধ।  

কোটি টাকার বেশি খরচ করে নির্মাণ হয়েছে রেগুলেটর, সেখানেও পানি শূন্য প্রশ্ন উঠছে। আগে নদীর মোহনার পলি মাটি অপসারণ না করে আরও এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও কুমার নদীতে পানি আসবে না।

পদ্মার মোহনা মদনখালী পানির উৎস মুখটি খনন করা খুবই জরুরি। মোহনায় খনন না করে কুমার নদী খনন করা হয়েছে।

কুমার নদী খননে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও জনগণের কোনো উপকার আসছে না। উপরন্ত পানি শূন্য কুমার নদীতে চলছে ৬০টি ঘাটলা নির্মাণের কাজ।

প্রকাশ্যে নদীর জায়গা দখল করে ফরিদপুরের ডিক্রিরচর টেপপুরাকান্দী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ৪-৫ জন ইটভাটা মালিক ভাটার পেছন অংশে তথা মদনখালী নদীতে চালাচ্ছেন অব্যাহত মাটি কাটার মহাযজ্ঞ। প্রশ্ন উঠছে কুমার নদী খননের দায়ীত্বশীল ডিজাইনাররা নিরব কেন?

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, উল্লেখিত সব বিষয় আমরা জেনেছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়েই আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফরিদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।