ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ নৌকায় করে চাল বিতরণ করা হয়

চাঁদপুর: ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ছয় জেলার পাঁচটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার রয়েছে আওতায় বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলার ইলিশ অভয়াশ্রম।

 

এসময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব চাল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে নিবন্ধিত জেলেদের কার্ড যাচাই বাছাই করে বিতরণ করেন জনপ্রতিনিধিরা। চলতি জাটকা মৌসুমে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ৮০ কেজি চালের মধ্যে পাঁচ থেকে আট কেজি করে চাল কম দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের মেঘনার পূর্ব পাড়ে তিন ওয়ার্ডে খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণকালে চাল কম দেওয়ায় হট্টগোল শুরু হয় জেলে ও ইউপি সদস্যদের মধ্যে। জেলেদের তোপের মুখে পড়েন ইউপি সদস্য সেলিম বেপারী। তাকে বেশ কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখেন জেলেরা। পরে অন্যান্য ইউপি সদস্য এসে তাকে মুক্ত করেন।  

মেঘনার পশ্চিম পাড়ে চরাঞ্চলের ৬ ওয়ার্ডে নৌকার মধ্যে রেখে চাল বিতরণ করেন চেয়ারম্যান কাশেম খান ও ইউপি সদস্যরা।

রহমান ও জামাল হোসেন নামে দুই জেলে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সরকারের দেওয়া অভিযান মেনে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। সংসার চলে না। সন্তানদের নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। এরপর দুই মাসের ৮০ কেজির চালের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে ৭০-৭২ কেজি। এ অনিয়মের বিচার করবে কে?

ইউপি সদস্য সেলিম বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, খাদ্য সহায়তা নেওয়ার জন্য জেলেদের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। কার্ড খরচ হিসেবে প্রত্যেক জেলের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নিয়েছি। ওই টাকাও সব জেলে দেননি। চাল কম দেওয়া হয় না। আমরা খাদ্য গুদাম থেকে যে পরিমাণ পাই, সে পরিমাণই জেলেদের দেওয়া হয়। বস্তার মধ্যে চাল কম থাকলে আমাদের সঠিকভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে জেলেদের অভিযোগ, তাদের ৮০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ কেজি করে। বস্তাগুলো ফুটো করে চাল কমিয়ে ফেলা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক জেলের কাছ থেকে আগ্রিম ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ৫ মার্চ এ ইউনিয়নে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরণ করা হয়। চাল কম দেওয়ায় হট্টোগোল বেধে যায়

বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল্যা পাটোয়ারি চাল কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ৭৮১ জন নিবন্ধিত জেলের জন্য ৬৩ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু গোডাউন থেকে সঠিক পরিমাণে চাল পাওয়া যায় না। আর শ্রমিকদের টাকা না দিলে তারা চাল ট্রাকে উঠায় না। তাছাড়া প্রতিটি বস্তার ওজন প্রায় এক কেজি। এসব কারণে কিছু চাল কম হয়। সরকারিভাবে পরিবহন বাবদ যে খরচ দেওয়া হয়, তাও খুবই কম।

জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি যে অনেক জেলের কাছ থেকে ইউপি সদস্যরা ২০০ টাকা করে নিয়েছেন। এটি কোনোমতেই ঠিক হয়নি। আমি পরিষ্কারভাবে তাদের বলে দিয়েছি, যাতে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শুধু ফিরিয়ে দিলেই হবে না, তাদের টাকা বুঝে পাওয়ার স্বাক্ষর এনে আমাকে দেখাতে হবে। কোনো ইউপি সদস্যের দায় আমি নেব না।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ বাংলানিউজকে বলেন, জেলেদের চাল কম দেওয়া এবং টাকা নেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার পরিবহন খরচ বহন করার পরও এভাবে জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়াটা অনিয়মের মধ্যে পড়ে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে আমরা বিষয়টি বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।