রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি বাড়ির ভিত খননের সময় পাশের জমির সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার (১২ মার্চ) বেলা ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে তার উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ধসে পড়া দেয়ালের নিচে আরও চার শ্রমিক আছেন- এমন সন্দেহ বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালায় ফায়ার সার্ভিস। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত নির্মাণ শ্রমিকের নাম- রিয়াজুল ইসলাম (৩৫)। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বলিয়াডাইং গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের ছেলে। তার মরদেহ রামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আহত অন্যরা হলেন- এনামুল হক (৩৫), পিলীপ (৪৩), কাজেম আলী (২৭) ও মনজুর আলম (৩৫)। তারা রামক হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে এনামুল হকের বাড়ি মহানগরীর হেতেম খাঁ এলাকায়। বাকি তিনজনের বাড়ি গোদাগাড়ীর বালিয়াডাইং গ্রামে।
এ ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাওয়া নির্মাণ শ্রমিক খায়রুল আলম ও রাজিব ইসলাম বাংলানিউজকে জানান- তাদের সবার গ্রামের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার বালিয়াডাইং গ্রামে। গত চারদিন থেকে তারা এখানে কাজ করছেন। শনিবারও তারা মোট ১৭ জন শ্রমিক সেখানে কাজ শুরু করেন। এরমধ্যে ৭ জন ভবনের ভীত কাটছিলেন। বেলা ৩টার দিকে পাশের সীমানা প্রাচীর হঠাৎ তাদের ওপরে ধসে পড়ে। এ সময় তারা দু’জন লাফ দিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বাঁচেন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা এসে এক এক করে পাঁচজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং দ্রুত রামেক হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর রিয়াজুলের মৃত্যু হয়। বাকি চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুজন অক্ষত রয়েছেন।
এদিকে, উদ্ধার অভিযানে থাকা রাজশাহী ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন- তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর স্থানীয় এবং অন্য শ্রমিকরা দাবি করছিলেন সেখানে ধসে পরা দেয়ালের নিচে আরও চারজন চাপা পড়ে আছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ফায়ার সার্ভিস প্রায় ২ ঘণ্টা সেখানে উদ্ধার অভিযান চালায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই বিকেল সাড়ে ৫টার পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, তারা খবর পান মহানগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায় সীমানা প্রাচীর ধসে ৯ জন চাপা পড়েছেন। তারপর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেখান থেকে পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে পাঠান। এর মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের মধ্যে রিয়াজুল ইসলাম নামে একজন মারা গেছেন। বাকি চারজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা শঙ্কামুক্ত।
তিনি বলেন- ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে। কিন্তু সেখানে আর কাউকেই পাওয়া যায়নি। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাকি শ্রমিকদের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আশপাশেই বসে ছিলেন। এ সময় সেখানকার উদ্ধার কাজ শেষ করে ফায়ার সার্ভিস।
রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। এরমধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই রিয়াজুল নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপ-কমিশনার (বোয়ালিয়া) সাজিদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ফায়ার সার্ভিস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়২০২২ ঘণ্টা, ১২ মার্চ, ২০২২
এসএস/এমএমজেড