ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘খাদ্য উৎপাদনেও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাধা এসেছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
‘খাদ্য উৎপাদনেও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাধা এসেছে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: ব্যাংকসহ খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য গবেষণা, বীজ উৎপাদন এমনকি সরকারি বাস চলাচলেও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাধা এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এক সময় যারা সরকারে ছিলেন তারা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যে পরামর্শই দেওয়া হতো সেটাই মেনে নিতেন বলেও জানান তিনি।

সোমবার (১৪ মার্চ) রাতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দীপক স্লোগান ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর পর থেকে বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? বিশ্ব যখন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে ছিল। বাংলাদেশ মানে অন্যের কাছে ভিক্ষা চেয়ে খাদ্য সংগ্রহ করা, দুর্ভিক্ষ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি। বিশ্বের কাছে মাথা নিচু করে চলা। এভাবে ২১ বছর চলার পর আমরা সরকার গঠনের সুযোগ পাই। সরকারে আসার পরপরই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল হারানো গৌরব আবার ফিরিয়ে আনা। অর্থনৈতিকভাবে দেশ যাতে উন্নত হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া। বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান দিয়ে গেছেন তাতে স্পষ্ট লেখা আছে সরকারি খাতও থাকবে, কো-অপারেটিভ থাকবে, বেসরকারি খাতও থাকবে। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কী করেছে? সে রকম কোনো কিছু তো করতে পারেনি। আমি সরকারে আসার পর সর্ব প্রথম যে কাজটা করেছি, প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম।  আজ যতগুলি ব্যবসা বেসরকারি খাতে এসেছে, যখন আমি ব্যাপকভাবে ব্যাংক করতে শুরু করলাম বা ব্যাংক বিমা বেসরকারি খাতে করার অনুমতি দিলাম, তখন অনেক বাধা এসেছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে বাংলাদেশে এত বেসরকারি ব্যাংক দিয়ে কী হবে? ব্যাংক তো লাভজনক হয় না। বরং সরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দেওয়া হবে এ ধরনেরও পরামর্শ কিন্তু বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বা খাদ্যে গবেষণা করা, বীজ উৎপাদন সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমাদের সরকারি বাস চলাচল করবে সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। আর তখন যারা সরকারে ছিল তারা এতই দুর্বল ছিল যে ওই আন্তর্জাতিক সংস্থা যাই পরামর্শ দিত তারা সেটাই মেনে নিত। কিন্তু নিজেদের যে একটা উদ্যোগ থাকবে, চিন্তা-চেতনা থাকবে, পরিকল্পনা থাকবে সেটা কিন্তু ছিল না।

তিনি বলেন, আমি সরকারে আসার পর থেকে কিন্তু আমি ওসবত পরামর্শ শুনি নাই। আমি শুধু একটা কথা বলেছি, দেশ আমাদের, আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি, এদেশের মানুষের মঙ্গল কীসে হবে সেটা আমরা সব থেকে ভালো করে জানি। কোনো একটা সংস্থা, দুই একটা অফিসার এসে কী বলবে? তারা আমাদের দেশকে কতটুকু চেনে, কতটুকু বোঝে, কতটুকু জানে যে এদেশের মানুষের কল্যাণ কীসে হবে? যেটায় এদেশের মানুষের মঙ্গল সেটাই আমরা করব। আজকে ব্যাংক, বীমা, বেসরকারি প্লেন, টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ফোন সবার হাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। যা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। আপনারা যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, শিল্প-কলকারখানা করেন আপনাদের আমি এও বলেছি আপনার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হবে। কতটুকু আমরা বিদেশে রফতানি করতে পারব, আবার নিজের দেশে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আর বাজার সৃষ্টি করতে হবে, আমার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই ক্রয় ক্ষমতা আমি তখনই বাড়াতে পারব যখন এদেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে, ক্রয় করবার মতো একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক শক্তিটা সে অর্জন করতে পারবে তখনই আমদের  দেশে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে।

এ সময় তিনি গৃহহীনদের দেওয়া ঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের কথা তুলে ধরে বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, এতে লাভবান কারা হচ্ছেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন। আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত হচ্ছে না, সেটা তো ব্যাপকভাবে বাজারজাত হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। বেসরকারি ব্যাংক-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাকে সরাসরি বলেছিল এতগুলি ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি তো অত্যন্ত ছোট। আমি বলেছি ছোটই যে থাকবে তা তো না, বড় হবে এবং আমরা বড় করব।

জয় বাংলা স্লোগান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের বিজয়ের স্লোগান। যে স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমি তখন ছাত্রলীগের একজন কর্মী, বঙ্গবন্ধু আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন জয় বাংলা স্লোগানটা মাঠে নিয়ে যেতে মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সে ভাষণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একদিকে স্বাধীনতার কথা বলেছেন, অপরদিকে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই তিনি তার সেই ভাষণ শেষ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এই স্লোগান এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার চেতনায়। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা শত্রু মোকাবিলা করতো এই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। যে স্লোগান এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সেই স্লোগান ৭৫-এর পর নিষিদ্ধ হয়ে গেল। যে স্লোগান মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে এত শক্তি দিয়েছিল যে তারা শত্রুকে মোকাবিলা করতে একটুও দ্বিধা করেনি সেই জয় বাংলা স্লোগান দিতে গিয়ে আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন।

আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমি ধন্যবাদ জানাই যে জয় বাংলা স্লোগান এখন জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বীকৃতি পাওয়া পর এগিয়ে এলেন ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন। এই জয় বাংলার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বে মানুষের কাছে বলতে চাই আমরা বিজয়ী জাতি। মাথা নত করে চলি না, চলব না। আজকে আমি বেশি খুশী হতাম যদি আমার বোন রেহানা পাশে থাকতো। কারণ আমরা দুটি বোনই বেঁচে ছিলাম, ও আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। কিন্তু ও না থাকলে আমি এতো দুর এগিয়ে আসতে পারতাম না। সে আমার একটা বড় শক্তি। কাজেই আমরা দুই জন আজকে সব থেকে আনন্দিত যে এই জয় বাংলা স্লোগান, যে স্লোগান এ দেশের মানুষকে নিরে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে বিজয় অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। যে স্লোগান দিয়ে এদেশের মানুষ রক্তের অক্ষরে লিখে গেছে আমি বিজয় আনতে চাই। এ জয় বাংলা আমাদের সবার।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
এসকে/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।