ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পর্দা নামলো ইতিহাসের দীর্ঘমেয়াদী বইমেলার, অপেক্ষা ১১ মাসের

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
পর্দা নামলো ইতিহাসের দীর্ঘমেয়াদী বইমেলার, অপেক্ষা ১১ মাসের ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ইতি টানলো অমর একুশে বইমেলা ২০২২। শুরু হলো পরবর্তী ১১ মাসের অপেক্ষা।

সেই অপেক্ষা প্রাণের মেলার, বইয়ের মেলার। এবারের বইমেলা ছিল চারদশকের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বইমেলা, যা চলে টানা ৩১ দিন।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১১ মাসের অপেক্ষার প্রহর শুরু হলো পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীকে উৎসর্গ করে ১৫ ফেব্রুয়ারি এই বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মেলার সময় ১৭ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। সাধারণ পাঠকদের কাছে বইমেলা হিসেবে পরিচিত এ মেলায় শেষ দিন পর্যন্ত মোট বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৫২ কোটি টাকার বই। এবারের বইমেলায় মানসম্পন্ন বই এসেছে ৯০৯টি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, ‘আজ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে, আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২ সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। একইসাথে আজ জাতির পিতার জন্মদিন। পাশাপাশি বেদনার এই কারণে যে, প্রাণের মেলায় আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিণী। তবে মেলা শেষ হয়ে এলেও প্রাণে রয়ে যায় প্রাণেরই অনিঃশেষ রেশ। তাই আজ আমরা আনন্দকেই প্রধান করে তুলতে চাইছি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর করোনা মহামারির ভয়াবহতায় আমরা বইমেলা শুরু করেও নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করতে বাধ্য হয়েছি। তবে এবার বইমেলা শুরুতে বিলম্ব হলেও সংস্কৃতিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ ও আনুকূল্যে ১৫ই ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়ে আজ ১৭ই মার্চ বইমেলা শেষ হচ্ছে। অমর একুশে বইমেলার প্রায় চারদশকের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বইমেলা।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একেডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, দেখতে দেখতে এই মেলা একটি মাস পেরিয়ে এলো। ২০২২-এর গ্রন্থমেলা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। সব আয়োজনই কিছু ত্রুটি থাকে, অমর একুশে বইমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকবো এবং সে প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই আপনাদের সবাইকে সঙ্গে পাবো।

সভাপতির বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক সেলিনা হোসেন বলেন, বইমেলা জাতির প্রাণকে আলোকিত করে, বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরে এবং প্রজন্মকে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। বাঙালির জীবনের এক অসাধারণ দিক এই বইমেলা।

তিনি বলেন, একুশে বইমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব একটুও কমেনি।

এদিকে এবারের বই মেলা কতটা সফল হলো, এমন জবাবে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, এই প্রশ্ন অনেকেই করছেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের একটু মেলা শুরুর সময়ের কথা মনে রাখতে হবে। তখন কিন্তু সবাই বলেছিলেন এবারের বইমেলা হলো, নিয়ম রক্ষার মেলা, ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মেলা। এজন্য প্রথমেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এবার বর্ধিত স্টলের কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না। কোনো রকমে মেলাটা আয়োজন করতে পারলেই হয়। কিন্তু প্রকৃতি আমাদের সহায় হলো। কোভিড-পরিস্থিতির উন্নতি হলো। আমাদের মহাপরিচালক উদ্যোগ নিলেন, আমাদের প্রতিমন্ত্রী পরামর্শ দিলেন এবং সর্বোপরি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলেন। মেলার সময় বর্ধিত হলো। অসংখ্য মানুষ এই ৩১ দিনের মেলায় অংশ নিলেন, বিপুল সংখ্যার বই বিক্রি হলো এবং বিক্রিত টাকার পরিমাণ গতবারের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৭ গুণ বেশি হয়েছে। এ-অবস্থায় নিশ্চয় বলা যায়, এবার একটি সফল বইমেলা হয়েছে। কেবল সফল নয়, নতুন অনেক বিষয়ের সংযোজন, বিশেষ করে, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বিষয় হিসেবে যেভাবে মেলায় উপস্থাপিত হয়েছে তার কারণে এবারের বইমেলা ইতিহাসে নতুন ব্যঞ্জনাময় ও তাৎপর্যপূর্ণ মেলা হিসেবে উল্লেখিত হবে।

একই মন্তব্য বিভিন্ন পাঠক আর প্রকাশকদেরও। তাইতো বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রকাশকদের যৌথ আয়োজনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অমর একুশে বইমেলায় ১০২টি কেক কেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কৃত্রিম লেকের ধারে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সংস্কৃতি সচিব অসিম কুমার দে, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদাসহ বিভিন্ন প্রকাশক।

অন্য প্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, একটা বড় আয়োজন করতে গেলে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবেই। এবারের মেলায় কোনো বড় ধরনের অঘটন ঘটেনি, এটাই সুখের বিষয়। সেসঙ্গে প্রথম দিন থেকেই এবারের মেলায় বেচাবিক্রি ভালো ছিল, যত দিন গড়িয়েছে বিক্রি ততই ভালো হয়েছে। সবমিলিয়ে এবারের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট।

এদিকে এবার অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এ মোট বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এর মধ্যে বাংলা একাডেমির বই বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার। ২০২১ সালে মোট বই বিক্রি হয়েছিল ৩ কোটি টাকার। সেদিক থেকে এবার সাড়ে ১৭ গুন বেশি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এছাড়া এবার মেলায় মোট বই প্রকাশ হয়েছে ৩ হাজার ৪১৬টি। এর মধ্যে মানসম্পন্ন বই নির্বাচিত হয়েছে ৯০৯টি। যা পুরো বইয়ের ২৬ ভাগ। ২০২০ সালে এই হার ছিল ১৫ ভাগ।

সর্বশেষ মেলার শেষ মুহূর্তে এসে আধাঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় বইমেলার। সেদিক থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাঠকরা ব্যাগ ভর্তি করে বই কিনে ঘরে ফিরেছে। আর সাড়ে ৯টার কিছু পরে নিভে যায় চারদশকের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বইমেলা। শুরু হয় আরও একটি বইমেলার অপেক্ষা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
এইচএমএস/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।