ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনায় আটক ১০ জন জামআতুল মুসলেমিনের নেতাকর্মী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২২
খুলনায় আটক ১০ জন জামআতুল মুসলেমিনের নেতাকর্মী

খুলনা: খুলনার খালিশপুর থেকে আটক ১০ জন জেএমবি মতাদর্শী নতুন জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুসলেমিনের নেতা ও সদস্য। আটকরা হলেন—সংগঠনের আমির আনোয়ার কবির মিলন ওরফে মিদ্দাত হোসেন (৫০), সোহেল রানা (৩০), আমিনুল (৩৮), কামরুল ইসলাম (৫৫), রিফাত রহমান (২৪), আব্দুর রউফ (৬২), মো. শেখ ফরিদ (২৭), আব্দুল আলীম (৫০), মো. রফিকুল ইসলাম (৪৬) ও তালহা ইসলাম (১৯)।

শনিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে খুলনা মহানগরীর লবনচরাস্থ র‌্যাব-৬ এর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিয়ে র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমেদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় খুলনার খালিশপুর এলাকার ২৫৩ বিআইডিসি রোডের আলমগীর শেখ অরফে আলম বাসভবনের তৃতীয় তলায় মাদানী নিসাব খালিশপুর বয়স্ক মাদ্রাসা/মসজিদে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘জেএমবি’ মতাদর্শীর নতুন সংগঠন ‘জামআতুল মুসলেমিন’ এর একটি গোপন বৈঠক চলছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৬ (স্পেশাল কোম্পানি) এর একটি টহল ও বিশেষ আভিযানিক দল। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমেদ আরও বলেন, সংগঠনটির স্বঘোষিত আমির আনোয়ার কবির মিলন অরফে মিদ্দাত হোসেন ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে লেখাপড়া করেন। লেখাপড়া শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে আসলে তার সাথে ভোলা-চরফ্যাশন এলাকার প্রফেসর মজিদের সাথে পরিচয় হয়। প্রফেসর মজিদ তৎকালীন জেএমবির আমির শায়খ আব্দুর রহমান এবং শায়খ সাইদুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। জেএমবির ভারপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর মজিদ ৬৩ জেলায় বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি জেল হাজতে ছিল। জেলে থাকাকালে প্রফেসর মজিদ জেএমবির নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পৃক্ততা রাখতেন।

মিদ্দাত হোসেন সৌদি আরব থেকে ফেরার পর থেকেই মজিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে মজিদের কাছে জেএমবির বায়াত গ্রহণ করেন। সে সময়ে মিদ্দাত হোসেনের সাথে জেএমবির অনেক সদস্যের পরিচয় ঘটে। সন্দেহভাজন জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য ২০১২ সালে ডিবি পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

এরপর থেকে মিদ্দাত হোসেন একটি নিজস্ব সংগঠন তৈরি করার ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ২০১৮ সাল থেকে প্রফেসর মজিদের সাথে সম্পৃক্ত বেশ কিছু ব্যক্তি মিদ্দাত হোসেনকে সাথে নিয়ে নতুন সংগঠন গঠন করা এবং লোক সংগ্রহের জন্য একতাবদ্ধ হন। এ প্রেক্ষিতে তারা দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে জনগণের একটি বড় অংশকে নিজেদের দলে ভেড়ানো এবং পরবর্তীতে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।

প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মিদ্দাত হোসেন এবং তার সহযোগীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সুরা সদস্য নিয়োগ করে সুরা সদস্যের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকা থেকে সাথী সদস্য গ্রহণের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা এলাকাতে রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম ব্যাপক আকারে চলছে। পরবর্তীতে নিকট ভবিষ্যতে কুষ্টিয়া, রাজশাহী, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ এলাকাতে রিক্রুটমেন্টের পরিকল্পনা ছিল এবং অদূর ভবিষ্যতে তারা সারাদেশব্যাপী রিক্রুটমেন্ট করার জন্য সকলকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলেন।

এ প্রেক্ষিতে এবার তিনদিনের প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়, যেখানে মূল লক্ষ্য ছিল নেতৃত্ব এবং সারাদেশে কীভাবে কার্যক্রম চলবে সেটি ব্যাখ্যা করা। এই প্রোগ্রামকে সফল এবং পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে অন্যান্য সুরা সদস্যরা তাদের কর্মীদের নিয়ে প্রোগ্রামে যোগ দেন। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২২
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।