ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাবিতে শিক্ষার্থীদের খাবার কেড়ে নিল ছাত্রলীগ

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
রাবিতে শিক্ষার্থীদের খাবার কেড়ে নিল ছাত্রলীগ

রাবি: মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ খাবারের শতাধিক প্যাকেট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলে এ ঘটনা ঘটে।

ফলে হলটির অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীই স্বাধীনতা দিবসের এই বিশেষ খাবার থেকে বঞ্চিত হয়।

অভিযুক্তরা হলেন- জোহা হলের সভাপতি চিরন্তন চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলামের অনুসারী বাঁধন, ওয়াহিদ, তুষার, মিনাল ও আলামিন প্রমুখ। তাদের সঙ্গে অন্যান্য হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীও ছিল। গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের হল কমিটি ঘোষণা হয়। কমিটিতে নেতৃত্ব পাওয়ার দু’দিনের মাথায় হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন কর্মকাণ্ড ঘটালেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে বিশেষ খাবারের বরাদ্দ করে কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৩০ টাকার বিনিময়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। শনিবার দুপুর থেকে হলের ডাইনিং কর্মচারীরা টোকেন জমা নিয়ে খাবার পরিবেশন শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের চিরন্তন চন্দ ও মো. মোমিনসহ অন্তত বিশজন বিনা টোকেনে খাবার নিতে যান। এসময় সেখানে উপস্থিত হল কর্তৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খাবার নিয়ে যায় তারা। তারা প্রত্যেকেই ৫-৭টি করে প্যাকেট নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান। এতে হলটির অন্তত ১০০ শিক্ষার্থী খাবার থেকে বঞ্চিত হন।

হল প্রশাসন জানায়, জোহা হলে ৪৩০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন। আবাসিক শিক্ষার্থী ও হলের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য মোট ৪৮০ প্যাকেট খাবার প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের এমন কর্মাকাণ্ডে খাবার ঘাটতি তৈরি হয়।

নাম প্রকাশ না করে খাবার না পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, তিনদিন আগে আমি বিশেষ খাবারের টোকেন কিনে নিয়েছিলাম। কিন্তু খাবার পাইনি। পরে প্রাধ্যক্ষ স্যার বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাদের দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সভাপতি চিরন্তন চন্দ বলেন, হলের প্রাধ্যক্ষ স্যার ছাত্রলীগের সবার খাবার একসঙ্গে দেবে বলে আমরা সেখানে যাই। তবে আমি ডাইনিং এ খুব অল্প সময় থাকার পর চলে আসি। আমাদের আসার পর হলে অনেকে নাম ভাঙিয়ে খাবার নিতে পারে। সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আমরা কোনো বেশি খাবারের প্যাকেট নেয়নি।

হল প্রাধ্যক্ষ একরামুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই আমরা খাবারের প্যাকেটসহ আনুষাঙ্গিক কাজ করছিলাম। খাবার বিতরণ শুরু করলে ছাত্রলীগের প্রায় ২০ জন এসে টোকেন ছাড়াই অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট নিয়ে যায়। আমরা বার বার বলার পরও তারা কথা শোনেনি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের খাবার দিতে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসি।  

তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, জোহা হলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা কুপন দেখিয়ে খাবার নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, জোহা হলে খাবারে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি শুনে প্রক্টোরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সম্পর্কে হল প্রাধ্যক্ষ আমাদের কাছে রিপোর্ট পেশ করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।