ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আ.লীগ সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না: ডিএমপি কমিশনার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
আ.লীগ সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের একটি দোষ হলো, সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না। অপর দিকে রাজনৈতিক একটি দলের নেতারা মিথ্যা কথা বলতে বলতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়, যেন মনে হয় তাদেরটাই সত্য।

ওই দল বলেছিল, ৭ মার্চের ভাষণে নাকি মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিল। তাহলে রাজারবাগের পুলিশ কিভাবে বুঝেছিল কি করতে হবে?

শনিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মুজিব শতবর্ষে স্মারকগ্রন্থ 'অনশ্বর পিতা'র মোড়ক উন্মোচন ও 'রঙ তুলিতে আঁকি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ' শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে যেভাবে বলেছেন, এরপরে ফরমালি আর স্বাধীনতার ঘোষণার তেমন কোনো প্রয়োজন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ রাজারবাগ পুলিশকে উজ্জীবিত করেছিল।

মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক সেই দলের সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর...। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করেছিল, এই বলে পাকিস্তানের ওখানে কি করেছো...। আর এখন সে নাকি বড় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সেটা আর না বলি। কিন্তু সত্য জিনিসটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বাংলাদেশ পুলিশ প্রমাণ করেছে, আমরা ৭ মার্চের ভাষণের শপথ নিয়েছিলাম দেশমাতৃকার জন্য প্রয়োজনে রক্ত দেবো। জীবন দেবো এবং সেই সত্যের বহিঃপ্রকাশ কিন্তু সারা বাংলাদেশেই ঘটেছিল। শুধু রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নয়।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকেই সশস্ত্র প্রতিরোধটি শুরু হয়েছিল। অন্যকেউ হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার দাবিদার তারাই করতো। কিন্তু আমরা পুলিশ, আমরা এই দাবিটি সাহস করে করতে পারিনি। আমার রাইফেলের গুলি যখন পাকিস্তানি সৈন্যদের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় তখনই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছি। তখন তো আর কারো ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করিনি। জাতির পিতার ৭ মার্চ যেভাবে বলেছেন এরপরে ফরমালি আর স্বাধীনতার ঘোষণার তেমন কোনো প্রয়োজন ছিল না। হয় তো আন্তর্জাতিক কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে জাতির পিতা এটি ঘোষণা করেছেন। রাজারবাগে যে পুলিশ কনস্টেবলরা গুলি করেছিল কোন ঘোষণা তাদেরকে উজ্জেবিত করেছিল?

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, যুদ্ধ তখনও শুরু হবে হবে এরকম সময় চুয়াডাঙ্গায় ২৫ তারিখ ২৬ তারিখের দিকে আমাদের এলাকার যত পুলিশ ছিল, আনসার বাহিনীর যত সদস্য ছিল সবাই যার যার মতো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছে। কি ব্যাপার কুষ্টিয়া কেন? তখন তারা বলেছে, কুষ্টিয়ায় খান সেনারা এসেছে। তাদের মারতে যাবো। ফরমালি অন্য কোনো সেক্টরে যুদ্ধ তখনো শুরু হয় নাই। কিন্তু এরকম একটি মানুষের জনরোষের সৃষ্টি হলো যেখানে সমস্ত পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর হাত থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে গিয়েছিল একটি মানুষও জীবিত ফিরতে পারেনি। তাদের কিছু আমাদের আলমডাঙ্গার রেল লাইন ধরে হেঁটে হেঁটে যশোরে ফেরার চেষ্টা করছিল। গ্রামের মানুষেরা হাঁসুয়া নিয়ে ধাওয়া করে ৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে কুপিয়ে মারে। গ্রামের সাধারণ মানুষসহ সবাইকে বলে দিতে হয়নি যুদ্ধ শুরু করো। তাদের ঘোষণা লাগেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা ঠিকমতো পেয়ে গেছিল।

তিনি বলেন, ওয়ারলেসে সারাদেশে ঘোষণা হয়েছিল রাজারবাগে আক্রমণ হয়েছে। রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইপিআর সব জায়গায় যখন আক্রমণ হলো। এ বিষয়টি জানিয়ে যুদ্ধের জন্য একেবারে প্রস্তুতির চূড়ান্ত যে কাজটি পুলিশের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জেলায় পুলিশ লাইনের যত অস্ত্র ছিল সমস্ত অস্ত্র, গুলি সাধারণ মানুষকে দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলছিলেন, মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনস থেকে অস্ত্র পেয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যত পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছেন। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের আর কোনো বাহিনীর এত সংখ্যক প্রাণহানি হয়েছে। এটার দুইটা কারণ থাকতে পারে, একটি- আমাদের যে সদস্যরা যারা ছিল তাদের প্রশিক্ষণটা মূলত পুলিশ হিসেবে। যুদ্ধের উপযোগী হিসেবে পুলিশের প্রশিক্ষণ ছিল না। আমাদের কাছে ওরকম ভারী অস্ত্রের অভাব ছিল। ফলে আমরা যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেক জায়গায় আবেগের বশবর্তী হয়ে আগ বেড়েছি এবং অকাতরে প্রাণ দিয়েছি সেটি একটি কারণ হতে পারে। এছাড়াও আমাদের ১৪ হাজার সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।  

তিনি আর বলেন, অত্যন্ত ছোট একটি বাহিনী ছিল আমাদের ৩৩ থেকে ৩৪ হাজারের মতো। তার ভেতরে ১৪ হাজার মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিল। যুদ্ধে ডিআইজি থেকে শুরু করে পুলিশ সুপাররা যোগ দেন। আমরা জানি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, কুমিল্লার পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে একজন ডিসট্রিক্ট এন্টি করাপশন অফিসার ছিলেন  সেখানে শহীদ হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের কনস্টেবল ও এসআইদের অবদান সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজশাহী ডিআইজি থেকে শুরু করে পুলিশের সিনিয়র সহকর্মী যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে আমরা অনেক কিছু জানতে পারিনি।
কিন্তু জুনিয়র সদস্য যারা বিশেষ করে কনস্টেবল, এসআই তাদের আত্মত্যাগের বিষয় আসলে আমাদের জানাশোনা খুবই কম ছিল।

হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা স্বরণ করে ডিএমপি প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন দেশ স্বাধীন করেছি একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা করেন যদি হলি আর্টিজানের মতো এই ঘটনাটি আরেকবার পুনরাবৃত্তি ঘটত তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন কোথায় থাকতো। বাংলাদেশের সমস্ত মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এদেশে কাজ করতো না।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেছে। আগুন সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেছে। আমরা তাদের বীরত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের দেখানো পথে যেন চলতে পারি এবং বুকে সাহস নিয়ে সামনের দিকে যে পরিস্থিতি আসুক না কেন আমরা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব সেই প্রত্যাশা করি।

মুজিব শতবর্ষ, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এসজেএ/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।